আলোকচিত্রী আমানুল হক মারা গেছেন

একুশে পদক জয়ী প্রখ্যাত আলোকচিত্রী আমানুল হক মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2013, 10:19 AM
Updated : 3 April 2013, 11:00 AM

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রের স্থির আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করা ছিল আমানুল হকের দীর্ঘ পেশাদারী জীবনের অন্যতম প্রধান কীর্তি।

ধানমণ্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যায় তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন কবি বেলাল চৌধুরী।

তিনি জানান, অসুস্থ হয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আমানুল হক। বুধবার বিকেলে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে আইসিইউতে নেয়া জরুরি হয়ে পড়ে। তবে সেখানে জায়গা না পাওয়ায় তাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

রাজধানীর শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্ল্যাটে তিনি থাকতেন।

আমানুল হক সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই তিনি আঁকাআঁকি করতেন। বড় হয়ে কিছুদিন আর্ট কলেজে লেখাপড়াও করেছেন তিনি। পরে চাকরি পান ঢাকা মেডিকেল কলেজে আর্টিস্ট কাম ফটোগ্রাফার পদে। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিনি এঁকে দিতেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের।

ফ্রিল্যান্স এই আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধরা পড়ে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভাষা শহীদ রফিকের গুলিবিদ্ধ মরদেহের ছবিসহ অসংখ্য বিরল ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন আমানুল হক।

সে সময় শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কলকাতায় গিয়ে সান্নিধ্য পান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেন আমানুল হক।

সেই অতীত দিনের স্মৃতিচারণ করেন আমানুল হক: ৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি ঢাকা থেকে কলকাতা চলে যাই। সেখানে দেখা হয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সুভাষ ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের খুবই ঘনিষ্ঠ। তিনি আমাকে সত্যজিতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এবং আমি আমার আলোকচিত্রগুলো সত্যজিতকে দেখাই।

‘সত্যজিত আমাকে বলেন, তিনি নতুন সাহিত্য-এর একটি সংখ্যায় আমার কিছু ছবি তিনি দেখেছেন। তার এ কথায় আমি খুবই উৎসাহিত হই তার সঙ্গে কাজ করার জন্য। আমার মতে সত্যজিৎ রায় একজন পুর্ণাঙ্গ মানুষ। তার মতো এমন মানুষ বিরল।’

আমানুল সত্যজিৎকে ‘গুরু’ বলে মানতেন।

এই প্রখ্যাত আলোকচিত্রীর তোলা সত্যজিতের বেশ কিছু দুর্লভ ছবি নিয়ে ‘প্রসঙ্গ সত্যজিৎ’ শীর্ষক একটি ফটো অ্যালবাম প্রকাশ করেছে সাহিত্য প্রকাশ।

কবি বেলাল চৌধুরী বলেন, “আমানুল হক বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন আহমেদের খুবই কাছের লোক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের অসংখ্য আলোকচিত্র তার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়েছে।”

“সত্যজিৎ রায় তাকে খুবই পছন্দ করতেন। অকৃতদার এই আলোকচিত্রীকে সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী অসংখ্যবার রান্না করেও খাইয়েছেন।”

এই আলোকচিত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।