সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর দায়িত্ব পালনের সময় ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে দেশের ভেতরে ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ৮০ হাজার ৬৫ টাকা নিয়েছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে মুহাম্মদ ইউনূসের এই ‘বাড়তি সময়’ দায়িত্ব পালন বৈধ ছিল কি না, ওই সময়ে তিনি কীভাবে কতো টাকা ব্যাংক থেকে নিয়েছেন- তা খতিয়ে দেখতে গতবছর ২ অগাস্ট অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রিসভা।
সে অনুযায়ী, গত বছরের ৯ অক্টোবর অর্থমন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তথ্য চায়। পরদিন গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্ত্রাণালয়ে এই প্রতিবেদন পাঠায়। ২০০০ সালের জুন থেকে ২০১১ সালের মে পর্যন্ত সময়ে ইউনূস কি কি সুবিধা নিয়েছেন- তার বিবরণ দেয়া হয় এই প্রতিবেদনে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই অতিরিক্ত সময়ে ড. ইউনূসের নেয়া সুযোগ সুবিধার আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পরই এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে সরকার।”
২০০০ সালের জুন থেকে ২০১১ সালের মে পর্যন্ত সময়ে ইউনূস মোট ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৪ টাকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ নিয়েছেন ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪১ টাকা এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাবদ নিয়েছেন ২ লাখ ১৬৩ টাকা।
ওই সময়ে ইউনূসের নেওয়া এই আর্থিক সুবিধা (৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৪ টাকার) থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৫২ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ মূল বেতনের ৭.৫০ শতাংশ হিসেবে ২ লাখ ২০ হাজার ১৬১ টাকা বা মোট ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯০৩ টাকা কেটে রাখে গ্রামীণ ব্যাংক। ফলে এই ১১ বছরে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নিট ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৮০১ টাকা বা সুবিধা নিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূস প্রতি মাসে গ্যাস ও বিদ্যুত বিল নিজে পরিশোধ করতেন। এছাড়া গাড়ির জ্বালানি ব্যয় বাবদ মাসে ২০০ টাকা করে পরিশোধ করতেন।
বেতন ভাতার বাইরে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসে একটি টেলিফোন ব্যবহার করতেন। এছাড়া বাসায় দুটি টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি পিএবিএক্স টেলিফোন ব্যবহার করতেন। অফিসে চারটি পত্রিকা পড়তেন। ব্যবহার করতেন একটি ব্যক্তিগত গাড়ি।
গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভ্রমণ সংক্রান্ত ব্যয়ের তথ্যও জানতে চেয়েছিল অর্থমন্ত্রনালয়।
গ্রামীণ ব্যাংক জানিয়েছে, ইউনূস ৬০ বছর বয়সসীমা অতিক্রম করার পর বিদেশ ভ্রমণের জন্য কোনো অর্থ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেননি। সব ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদন নেয়া না হলেও তিনি বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি পর্ষদ জানিয়ে যেতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংককে লেখা গ্রামীণ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, “আমরা ধারণা করি যে, যেসব প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানই তার ভ্রমণ ব্যয় বহন করেছে। আর গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে দেশে ভ্রমণের জন্য ৬০ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ভ্রমণ ভাতা বাবদ ৮০ হাজার ৬৫ টাকা গ্রহণ করেছেন।”
১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হওয়ার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসলেও ২০১১ সালে বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছর মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স প্রায় ৭১ বছর।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যাংকের এমডি পদে থাকা যায়।
ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়।
এরপর গতবছর গ্রামীণ ব্যাংকে এমডি নিয়োগের বিধি পরিবর্তন করে আইন সংশোধন করা হলেও এখনো নতুন কাউকে ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি।