‘রাজাকারদের তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে জামায়াত-শিবির’

যুদ্ধাপরাধের দায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বৃহস্পতিবার নোয়াখালীতে হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। তাদের হামলার থেকে রেহাই পায়নি মন্দির- প্রতিমাও।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2013, 07:27 AM
Updated : 1 March 2013, 07:48 AM

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলামপুর ও আলাদীনগর গ্রামে  জামাত-শিবিরের এই  তাণ্ডবে নি:স্ব হয়ে পড়েছে ৭৬টি হিন্দু পরিবার। ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে-মুখে এখনো রয়েছে আতঙ্কের ছাপ।

ওই এলাকার ১০টি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় জামাত-শিবির কর্মিরা। হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় ৫৩টি ঘরে।

হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছে রাজগঞ্জের মালি বাড়ির পরিবারগুলো। হামলার পর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত খাওয়া হয়নি তাদের কারো। কোথায় মাথা গুঁজার ঠাই হবে তা নিয়েও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। আকস্মিক হামলায় সবকিছু হারিয়ে হতবাক হয়ে গেছেন তারা।

দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেলে মালি বাড়ির  বিশখা (৫০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবুরে যুদ্ধের সময় রাজাকাররাও এমন করে আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়নি।  শুধু একবার এসেছে, বাড়িতে রাউন্ড দিয়ে চলে গেছে। তাতেই শেষ হয়ে গেছে সব কিছু।”

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর প্রচারের পরপরই হঠাৎ করে  মুখে কাপড় বাধা কিছু যুবকের নেতৃত্বে এক থেকে দেড়শ’ মানুষ লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায়।

‘আল্লাহু আকবার, নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিতে দিতে ‘ধর-মার, পোড়া’ বলতে বলতে রাজগঞ্জের গঙ্গাপ্রসাদ  ভূঞা বাড়ি, আচার্য্য  ঠাকুর বাড়ি, মালী বাড়ী, পুলিন দত্ত বাড়ি, কুরী বাড়ি, বণিক বাড়ী, শান্তি বণিক বাড়ী, শীল বাড়ী, মতিলাল বাবুর বাড়িসহ প্রায় ১০টি হিন্দু বাড়িতে ঢুকে তারা ভাংচুর, লুটপাট চালায়। এ সময় প্রায় ৩৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ফেলা হয়।

হামলার সময় ওইসব পরিবারের সদস্যরা দ্রুত পালিয়ে প্রতিবেশি মুসলমানদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।

জামায়াত-শিবির কর্মীরা এ সময় হিন্দুদের উপাসনালয়ের মধ্যে ঠাকুর বাড়ির মন্দির, রাজগঞ্জ বাজার মন্দির, পুলিন দত্ত বাড়ীর মন্দির ও কালীরহাট মন্দিরসহ পাঁচটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মোহতাছিম বিল্লাহ সবুজ ও এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুর রহিম বাবুলকে বেদম মারধর করে জামায়াত- শিবির কর্মীরা। তাদের দুটি ক্যামেরা ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় তারা।

পরবর্তীতে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জামায়াত-শিবির কর্মীদের এই তাণ্ডবের বর্ণনা দিতে গিয়ে কুরি বাড়ির খগেন্দ্র চন্দ্র দে (৮০) বলেন, “আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। কিন্তু কালকের [বৃহস্পতিবার]  ঘটনার মতো এমন ঘটনা সে সময়ও এ এলাকায় ঘটেনি। আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রাজাকারদের তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।”

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন,  পরিস্থিতি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে চার  টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয় বলেও জানান তিনি।

জেলা পরিষদের প্রশাসক  এবিএম জাফর উল্যাহ জানান, হামলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  ৩৬টি পরিবারের মাঝে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি মন্দিরের জন্য দেয়া হবে ছয় লাখ টাকা।