১২০ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা শুরু

জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2013, 11:40 PM
Updated : 27 Feb 2013, 11:41 PM

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৯ মিনিটে সাঈদীকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসার পর এজলাসে আসন গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর এবং দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

বিচারপতি ফজলে কবীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেয়ার পর সোয়া ১১টার দিকে বিচারপতি আনোয়ারুল হক ১২০ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন শুরু করেন।   

রায়ের জন্য সাঈদীকে সকালেই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। রায় ঘোষণার আগে আদালতের এজলাসে তাকে একটি চেয়ারে বিমর্ষ বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় খয়েরি রঙের হাতের কাজ করা টুপি ও ডানহাতে কালো চামড়ার বেল্টের ঘড়ি। এ সময় তাকে কিছুটা দুঃচিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছিল।

খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে একাত্তরে সাঈদীকে পিরোজপুরের মানুষ চিনত ‘দেইল্লা  রাজাকার’ নামে। ২০টি অভিযোগে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে  ট্রাইব্যুনাল রায় অপেক্ষমাণ রাখে।

২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর এটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের মামলার তৃতীয় রায়। 

প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়।

আর একই ট্রাইব্যুনালে ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে তার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চলছে সারা দেশে।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতায় বৃহস্পতিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করছে জামায়াতে ইসলামী। ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিয়ে শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত নভেম্বর মাস থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা চালিয়ে আসছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি।     

গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার রায়ের দিনেও সারা দেশে হরতাল করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তাদের এই সহিংস কর্মসূচি প্রত্যাখানের পাশাপাশি একাত্তরে মানবতাবিরোধী ভূমিকার কারণে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জোরালো হয়ে উঠেছে। 

দুই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান আমিরসহ আরো পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর শুনানি চলছে।

রায় উপলক্ষ্যে বুধবার থেকেই ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ বলছে, যে কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা ঠেকাতে তারা প্রস্তুত।

জামায়াতের হরতাল প্রতিরোধেরও ঘোষণা দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চ।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে বলেই তারা মনে করেন। সুতরাং আসামির সর্বোচ্চ শাস্তিই তারা আশা করছেন।

ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মেজবাহউদ্দিন জানান, রায় ঘোষণা হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। আসামিকে সকাল ১০টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদীকে। পরের বছর ১৪ই জুলাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াত নেতাদের মধ্যে দলটির নায়েবে আমির সাঈদীর বিরুদ্ধেই সবার আগে অভিযোগ গঠন হয়। একাত্তরে ৩ হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর ও ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০টি ঘটনায় ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

একই বছরের ৭ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনসহ মোট ২৮ জন রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন।

এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দি ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করে। আসামিপক্ষে ১৭ জনের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হয় গত ২৩ অক্টোবর।

চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন বিচারক।