শাহবাগ আন্দোলনের এই কর্মীকে শুক্রবার রাতে মিরপুরের পলাশনগরে হত্যা করা হয়। পুলিশ বলছে, কোপানোর পর জবাই করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজীবের মা নাগির্স হায়দার বললেন, “আমার সঙ্গে কাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজীবের শেষ কথা হয়েছিল। ফোন করতেই সে বললো- ‘মা আমি এখন রাস্তায় আছি, তোমার সাথে পরে কথা বলবো’।”
সেই শেষ কথা আর বলা হলো না- আক্ষেপ ঝরলো এই সন্তানহারা মায়ের।
জানালেন, ছোটবেলা থেকেই রাজীব ছিল অন্তর্মুখী স্বভাবের। বাড়ি থেকে বাইরে বের হতো কম, পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও ছিল অল্প।
তাই ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এই হত্যা কি না তা এক বাক্যেই নাকচ করে দিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, “আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিল না। সে কখনো কাউকে কটূকথা বলেনি। তার কোনো বদঅভ্যাসও ছিল না।”
“বেশিরভাগ দিনই অফিসের শেষ হওয়ার পর সে সোজা বাসায় ফিরে আসতো। হয় ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করতো, নয়তো বই পড়তো। পাঠ্যবই পড়ার চাইতে বাইরের বই পড়ার দিকেই তার আগ্রহ ছিল বেশি।”
রাজীবের মা কাপাসিয়া থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বাবা ডা. মো. নাজিমুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। উচ্চমাধ্যমিকের পড়া অবস্থায় কাপাসিয়ায় সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
নাজিমুদ্দিন বলেন, “বাবা-ছেলে হলেও ছোটবেলা থেকেই সে আমার বন্ধু ছিল। আমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট সেই খুলে দিয়েছে। তার বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা এমন গভীর ছিল যে আমি নিজেই মাঝে মাঝে তার ছাত্র হয়ে যেতাম।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শেষের পর তিনি সপরিবারে ১৯৮৩ সালে ইরানে চলে যান। রাজীবের জন্ম সেখানেই। ইরানে ১০ বছর থাকার পর তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্যারিসে যান। ১৯৯৮ সালে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন।
নাজিমুদ্দিন জানান, চাকরি সূত্রে তিনি ১০ বছর ইরানে ছিলেন। ১৯৯৮ সালে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন।
দেশে এসে রাজীবকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করে রাজীব।
তবে সর্বশেষ আট মাস রাজীব ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন বলে জানান রাজীবের বাবা। পল্লবীর পলাশনগরে ২ কক্ষের বাসায় ভাই নোবেল এবং এক খালাত ভাইকে নিয়ে থাকতেন রাজীব।
রাজীবের হত্যাকাণ্ডে কাকে সন্দেহ করছেন- জানতে চাওয়া হলে রাজীবের মা বলেন, “এটা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাজ। রাষ্ট্রের কাছে আমার একটাই দাবি, আজ যারা আমার কোল খালি করেছে, তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়।”
শনিবার বিকেলে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে শাহবাগে জানাজা হয় ব্লগার রাজীবের।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে কফিন আনা হয় শাহবাগে। ‘শহীদ’ সহযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত সবাই তখন দাঁড়িয়ে যান। কফিন ছুঁয়ে শপথ নেন এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার।