দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তিতেও পরাভব মানেননি আন্দোলনকারী তরুণ-যুবারা। শুক্রবার শপথের পর নতুন উদ্যমে স্লোগান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আগের দিনগুলোর মতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকে এই আন্দোলনে সংহতি জানোনো হচ্ছে, যা সাহস আরো বাড়িয়ে তুলছে বলে আন্দোলনকারীরা বলছেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
শুক্রবার ‘প্রজন্ম চত্বরে’ লাখো মানুষের অংশগ্রহণে হয় অান্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ।
টানা পাঁচ দিন ধরে স্লোগান দিয়ে যাওয়া মুক্তা বাড়ৈ শনিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির যে দাবি আমরা তুলেছি, তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।”
ইডেন কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীর মতো অনেকেই পুরোটা সময় শাহবাগেই থাকছেন। খাওয়া-দাওয়াও হচ্ছে সেখানেই।
প্রথম দিন থেকেই আন্দোলনে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শফিক এম রহমান বলেন, “শাহবাগ থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা থামবে না। প্রত্যেকটা রাজাকারের ফাঁসির রায় নিয়ে তবেই আমরা রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরব।”
‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু’ সুর তুলে তিনি বলেন, “দৈহিক ক্লান্তি মাঝে মাঝে অনুভব করি, কিন্তু অক্লান্ত মন তাতে সায় দেয় না। সবার অংশগ্রহণ দেখে ক্লান্তি কেটে যায়।”
শফিক জানান, মাঝে মাঝে একটু সময়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে যান তিনি।
এছাড়া অনেকেই রয়েছেন, যারা মাঝে কোনো কাজ সেরে পুনরায় ফিরে আসছেন ‘প্রজন্ম চত্বরে’।
দুপুর ১টার আগেই শাহবাগ এলাকা ভরে উঠেছে কানায় কানায়। বিক্ষোভের মূল মঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এবং জামায়াত-শিবির প্রতিহত করার আহবান জানানো হচ্ছে।
এক সময় মূল মঞ্চ থেকে জানানো হয়, জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল চট্টগ্রামবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘বীর চট্টগ্রামের’ এই খবর স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানায় সমবেত জনতা।
এক সময় মঞ্চ থেকে বলা হয়, “বন্ধুরা রাজাকার গোলাম আযম এই (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আছে। আমাদের স্লোগানে নাকি তার ঘুম হচ্ছে না। আজ আমরা এত জোরে স্লোগান দেব, যাতে রাজাকারটা হার্ট অ্যাটাক করে।”
‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে’ দাবি করে দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডগুলো বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লেখার আহ্বান জানানো হয় মঞ্চ থেকে।
সকালে বিক্ষোভে সংহতি জানান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের দুই সন্তান নিতু ও মিশু, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আযাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষাথী, মহেশখালী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শপথের পর গভীর রাতেও শাহবাগে ছিল হাজারো মানুষ। অনেকে রাতটি সেখানেই কাটিয়ে দেন।
বাসাবোর মোখলেসুর রহমান জানান, তিনি শুক্রবার দুপুরে এলেও তার মা-স্ত্রী-সন্তানরা রাতে এসে তার সঙ্গে যোগ দেন।
মোখলেসুর রহমানের ১০ বছরের সন্তান হাফিজ বলে, “টিভিতে দেখেছি সবাই রাতে এখানে থাকে। আমিও আজ থাকব।”
মধ্যরাতে মঞ্চ থেকে ঢাকার বাড়ির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়ি ভাড়া দেবেন না।
অধ্যাপক পিয়াস করিমকে ‘জ্ঞানপাপী’ আখ্যা দিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে তাকে না ডাকতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।