বাকি ‘কাজ’ তরুণদের দিলেন যোদ্ধারা

একাত্তরে  মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পেলেও মুক্তির চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি মন্তব্য করে সেই অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের কাঁধে তুলে দিলেন রণাঙ্গনের যোদ্ধারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2013, 09:59 AM
Updated : 8 Feb 2013, 10:02 AM

কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে লাখো মানুষের মহাসমাবেশে এ দায়িত্ব তুলে দেন তারা।

এদেশের সূর্য সন্তানেরা হানাদারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু দেশ ‘রাহুমুক্ত’  না হওয়ায় স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর আবারো তরুণদের ডাকে রাজপথে নেমে আসেন তারা।

নতুন-পুরনো সেই যোদ্ধাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, “আমরা  একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ করে ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম, আমাদের কাজ শেষ; আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। কিন্তু তা হয়নি। এরপর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করে রাজাকারদের ফাঁসির রায় দিয়েছি। ভেবেছি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এটা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আমরা কষ্ট পেয়েছি, যখন দেখেছি সেই রায় বাস্তবায়ন হয়নি।”

গণআদালতের ওই রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালনের জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রণাঙ্গনের এই যোদ্ধা বলেন, “জাহানারা ইমামের পরে আমি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে সেই রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব তোমাদের হাতে দিয়ে গেলাম। তোমরা সেই দায়িত্ব পালন করবে। এটা আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।”

তরুণদের এই জাগরণে অসমাপ্ত কাজ শেষ হবে বলে মনে করেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা কামাল লোহানী।

তিনি বলেন, “আজ জনতার সমুদ্র জেগে উঠেছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম জেগেছে। ১৯৭১-এ আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মই মাঠে ছিলাম। কিন্তু আজ নবীন বন্ধুদেরও আমরা সঙ্গে পেয়েছি।”

অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য নবীনদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “রেসকোর্সের ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ছিল, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

“একাত্তরে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম চলছে।”

আর এই মুক্তির সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবে তরুণ প্রজন্ম।

তরুণদের এই প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা অভিহিত করে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধা অকাশ থেকে তোমাদের দিকে তাকিয়ে আনন্দে হাসছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শহীদ জননী জাহানারা ইমামও তোমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছেন। তাদের আত্মা আজ শান্তি পেয়েছে। কারণ  মুক্তিযুদ্ধের যে অসমাপ্ত কাজ তারা রেখে গিয়েছিলেন, এই তরুণেরা সেই কাজ সমাপ্ত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।

“শহীদরা বলছেন এই বাংলাদেশকে কেউ আর পদানত করতে পারবে না।”

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে লাখো মানুষের উচ্চকিত কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয় তার বাক্যে “আজকের মতো এমন দিন আমাদের আর কখনো আসিনি।”

এই আন্দোলন থেকে তরুণদের সম্পর্কে ভুল ভেঙে গেছে জানিয়ে তাদের কাছে ‘ক্ষমা’ চান এই লেখক।

তিনি বলেন, “আমি লিখেছি, তরুণ সমাজ ফেসবুকে লাইক দেয়া ছাড়া কিছু পারে না। কিন্তু তোমরা সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছো। আমি ক্ষমা চাই, তোমরা কি আমাকে ক্ষমা করবে না?”

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম শফিউল্লাহ বলেন,  ১৯৭১ সালে আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পাকিস্তানি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলাম। কিছু কুলাঙ্গার তাদের সাহায্য করেছিল, তারাই রাজাকার। তারাই আজ দেশে গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয়। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করতে হবে।

ওই ‘অপশক্তিকে’ প্রতিহত করতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান মুক্তিযুদ্ধের এই সেক্টর কমান্ডার।

শহীদ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান বলেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। আমাদেরকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

“এই সেই একাত্তর, যেখানে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আজ তোমরা রাজাকারমুক্ত দেশ গঠন করবে। শিবিরমুক্ত স্বাধীন দেশ গড়বে।”