অভূতপূর্ব জাগরণে জামায়াত রোখার ডাক

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে অভূতপূর্ব জাগরণ দেখল রাজধানীর শাহবাগ।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2013, 09:32 AM
Updated : 9 Feb 2013, 03:27 AM

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে এই শাহবাগে চার দিন ধরে অবস্থান চালিয়ে আসার পর শুক্রবার বিকালে মহাসমাবেশ থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে সোচ্চার থাকার শপথ নিয়েছেন লাখো জনতা।

জামায়াত যে যুদ্ধাপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল- তা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত দেয়া দুটি রায়েও।

এর মধ্যে একটি রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায় হয়েছে। আর দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

কিন্তু দ্বিতীয় রায়ে অসন্তুষ্ট মানুষ কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাহবাগে। শুক্রবার সেখানেই লাখো মানুষের মহাসমাবেশ করে একাত্তরের হত্যাকারী আর ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন তারা।

একই সঙ্গে জামায়াত সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়িক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয় এ সমাবেশ থেকে।

শপথে বলা হয়, “ফোকাস ইবনে সিনা রেটিনা ইসলামি ব্যাংকসহ জামায়াতের যাবতীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বয়কট করব। যে সব শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শিশুদের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চিন্তা তৈরি করছে। সেসব বর্জন করব। এক কথায় রাজাকার আলবদরদের সকল রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বয়কট করব।

“ভিডিও চিত্র ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের হুমকিদাতাদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করব। দিগন্ত টিভি, নয়া দিগন্ত পত্রিকা, ইসলামি টিভি, আমার দেশ, সংগ্রাম এবং জামায়াতের ব্লগ সোনার বাংলা বয়কট করব। অফিস আদালত বাসগৃহ কোথাও যুদ্ধাপরাধীদর কোনো পত্রিকা রাখা যাবে না।”

সমবেত সবাইকে নিয়ে সমাবেশের সভাপতি ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেট্ওয়ার্কের ইমরান এইচ সরকার এই শপথ পড়েন ।

গত ২১ জানুয়ারি আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে ‘পাকিস্তান রক্ষার’ নামে ‘সশস্ত্র বাহিনী’ তৈরির মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করে।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন এই ট্রাইব্যুনাল রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, “যে নিপীড়ন ও নির্যাতন সয়ে, যে রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে একাত্তরে মুক্তি অর্জন করতে হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেই সময়ের বিশ্ব ইতিহাসে আর কোনো জাতিকে বোধ হয় লক্ষ্য অর্জনে এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি।”

আর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সহযোগী বাহিনী লেলিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণের বিষয়ে আরো বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয় ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়ে।

জামায়াত এবং এর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের ডাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনতা সর্বান্তকরণে সমর্থন দিয়েছে এবং যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

“কিন্তু গুটিকতক বাঙালি, বিহারী, অন্যান্য পাকিস্তানপন্থী এবং কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, নেজাম-ই-ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশের ধারণা বর্বরভাবে প্রতিরোধ করতে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল অথবা সহযোগিতা করেছিল।

“আর তাদের অধিকাংশ বাংলাদেশের সীমানায় প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে বর্বর কর্মকাণ্ড সংগঠনে নিবেদিত হয়েছিল এবং সহায়তা করেছিল।”

রায়ে বলা হয়, “সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু, আওয়ামী লীগের অধীনে রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং বাংলাদেশের নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষ- যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছিল মূলত তাদেরকে চিহ্নিত করার ও নির্মূল করতে এক একটি বাহিনী কাজ করতে রাজাকার, আল-বদর, আল শামস ও শান্তি কমিটি ইত্যাদির মতো কয়েকটি সহযোগী বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনী।”

এর পর ট্রাইব্যুনাল মোটামুটি কোনো সন্দেহ না রেখেই সহযোগী বাহিনীর সঙ্গে এই ইসলামী দলটিকে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত দেখিয়ে বলেন, “পাকিস্তান রক্ষার নামে নিরস্ত্র বেসামরিক বাঙালি নিধনের জন্য এই সমস্ত আধা-সামরিক বাহিনী (সহযোগী বাহিনী) গঠনে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।”

“স্থানীয় দালাল বাহিনী, রাজাকার, আলবদর, জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আরো কিছু অংশ বাঙালি জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে বানচাল করার এবং জাতীয় অনুভূতি ও বাঙালি জাতির আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিস্যাৎ করার অভিপ্রায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে।”