মহাসমাবেশে সব মানুষকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই কর্মসূচির উদ্যোক্তারা, আহ্বান রেখেছেন সমস্বরে স্লোগান তোলার ‘কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় চাই’।
শাহবাগকেন্দ্রিক এই প্রতিবাদ এই সময়ের তারুণ্য নিয়ে হতাশা কাটিয়ে তুলেছে তাদেরও, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন একাত্তরে।
“বাহান্নো থেকে একাত্তর এবং পরবর্তীতে যে বাঁধন ছিঁড়ে গিয়েছিল, আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে তা আসলে ছেঁড়েনি। আমাদের সন্তানদের হাতেই আমাদের পতাকা নিরাপদ,” আন্দোলনে বৃহস্পতিবার সংহতি জানিয়ে বলছিলেন ধানমণ্ডির শংকরের বাসিন্দা আমিরুদ্দিন আহমেদ।
আবেগভরা কণ্ঠে ষাটোর্ধ এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “আমি প্রাণভরে দোয়া করি, ওরা অনেক বড় হবে।”
স্ত্রী রিজিয়া আমিরকে সঙ্গে নিয়ে শাহবাগের আন্দোলনে এসেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
আমিরুদ্দিনের মতো একাত্তরের প্রজন্মের অনেকেই নতুন ঠিকানা নিয়েছেন ‘প্রজন্ম চত্বরে’। তারা আসছেন, উজ্জীবিত হচ্ছেন।
শাহবাগের এই আন্দোলনের সঙ্গে মিল রেখে সারাদেশে চলছে একই ধরনের কর্মসূচি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত মিছিল করেছে সিপিবি ও বাসদ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালন করেছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
তবে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল শাহবাগই, নিজেদের কর্মসূচি যেখানেই থাকুক না কেন, একবার সবাই আসছেন শাহবাগে।
গত দুদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা এসে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা জানান।
তবে বৃহস্পতিবার এসে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
বিক্ষোভে বক্তব্য না দিয়েই ফিরতে হয় তাকে, যদিও এর আগে তার দলেরও অনেক নেতা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়ে গিয়েছিলেন।
হানিফের চলে যাওয়ার পর কর্মসূচির মূল মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসে, শুক্রবার বিকাল ৩টার মহাসমাবেশে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বক্তব্য রাখতে পারবেন না। কোনো দলের ব্যানার নিয়েও আসা যাবে না।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগ মোড়ে এই বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম।
এরপর বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা এতে যোগ দেয়। সকাল-দুপুর-রাত বিরামহীন চলছে এই অবস্থান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাবেশ বিশাল আকার ধারণ করে, রাত পর্যন্ত তা চলছিল।
স্লোগান, কবিতা, গানের সঙ্গে রাতের খাবারের ব্যবস্থাও চলছিল বিভিন্ন উদ্যোগে।
বুধবার শাহবাগে রাত কাটানো ইস্কাটন রোড এলাকার বাসিন্দা হাফিজ আল আসাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। রাতে জাদুঘরের সামনে সবজি খিচুরি রান্না হয়েছিল। সবাই ভাগাভাগি করে খেয়েছি, একেক প্লেটে দুইজন।”
বৃহস্পতিবার দিনভর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে যোগ দেয় শাহবাগের কর্মসূচিতে। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছে এই আন্দোলনে।
তাদের প্রায় সবার মাথা আর হাতে বাঁধা ছিল লাল-সবুজ পতাকা। আর মুখে ছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঘোষণা মঞ্চ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অন্যতম জুয়েল এ রব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই চিত্রকে ট্রাইবুন্যাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল থেকে শুরু হওয়া ‘স্বাধীন বাংলা’ শিরোনামে আঁকা এ চিত্র বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ছবির হাট এলাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
ধারাবাহিক এই আন্দোলনের তৃতীয় দিন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে সংগ্রহ করা হয় গণস্বাক্ষর।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা শাহবাগ ছেড়ে যাবেন না।