যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াতে ইসলামীর হরতালের মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যায় হাজারো মানুষের সমাবেশ থেকে শুক্রবার মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।
ওই মহাসমাবেশে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সমাবেশ শুরুর উদ্যোক্তাদের অন্যতম ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের মাহমুদুর হক মুন্সি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শাহবাগে সমাবেশ করা হবে আর শুক্রবার হবে মহাসমাবেশ।
এদিক রায় পুনর্বিবেচনা এবং ফাঁসির আদেশ না আসা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান চলবে বলেও জানান মাহমুদ।
সন্ধ্যা ৬টায় বিক্ষোভের মূলমঞ্চ থেকে জানানো হয়, মঙ্গলবারের মতো বুধবার সারারাতও শাহবাগে অবস্থান করবেন তারা।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেয়ার পর মঙ্গলবার বিকালে শুরু হয় শাহবাগের এই প্রতিবাদী কর্মসূচি।
তরুণদের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে এখন শামিল বিভিন্ন বয়সি হাজার হাজার মানুষ। তাদের সবারকণ্ঠে স্লোগান- ‘যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ এখন এক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শাহবাগে।
একাত্তরে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিসেনারাও প্রতিবাদের এই কর্মসূচিতে একাত্ম হয়েছেন, প্রেরণা যোগাচ্ছেন তরুণদের।
স্লোগানের পাশাপাশি দিনভর কবিতা-গান-বক্তব্যে মুখর শাহবাগ বিকালে রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
আন্দোলনকারীরা সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলেও সন্ধ্যার পর সমাবেশের বিস্তৃতি ছিল দক্ষিণে চারুকলা, উত্তরে রুপসী বাংলা হোটেল, পশ্চিমে আজিজ সুপার মার্কেট এবং পূর্বে শিশু পার্ক পর্যন্ত।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় শাহবাগের আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন রেখেছেন, আর কত খুন, আর কত ধর্ষণ করলে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি হবে?
এর আগে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানায়।
শুধু রাজধানী নয়, আশপাশের জেলা থেকেও শাহবাগের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. রফিকুল হাসান বিক্ষোভের কথা জানতে পেরে ছুটে এসেছেন গাজীপুর থেকে।
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে এই শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই রায় তরুণদের ব্যথিত করেছে। অচিরেই বাতিল করে সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই।”
শাহবাগে বিক্ষোভ চলছে এমন খবর পেয়ে চট্রগ্রাম থেকে মঙ্গলবার রাতের ট্রেনে ঢাকায় এসেছেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌমিত্র শুভ্র।
মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম আদালতের রায়ের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, “আর কতগুলো খুন আর ধর্ষণ করলে তার ফাঁসি হবে- মহামান্য বিচারক বলুন।”
মঙ্গলবার রাতভর শাহবাগে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী গান, কবিতা, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে এবং কাদের মোল্লাকে ছয়বার প্রতীকী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে একাত্তরের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধের দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা।