কাদের মোল্লার রায়: আপিল করবে প্রসিকিউশন

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার সাজা বাড়াতে আপিল করার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2013, 03:56 AM
Updated : 6 Feb 2013, 05:27 AM

রায়ের পর আব্দুল কাদের মোল্লা

প্রসিকিউশনের আপিল করার সুযোগ নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়কারী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান বুধবার জানান, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে যেটি প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে সেই চ্যালেঞ্জ করা হবে আপিল বিভাগে।

“আইন অনুসারে ৩০ দিনের মধ্যেই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে”, বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার তাদের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ায় এই সাজা দেয়া হয় বলে রায়ের উল্লেখ করা হয়।

রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটারদের পাশে রেখে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আপিলের বিষয়ে সরকার পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।

কিন্তু এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাইব্যুনালের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বিভিন্ন বাম দল এবং জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাও কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ব্লগার ও ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে হাজারো মানুষ মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। সারারাত সেখানে প্রতিবাদী গান ও শ্লোগানে নিজেদের দাবি তুলে ধরে এখনো তারা বুধবার দুপুরেও তারা সেখঅনেই অবস্থান করছিলেন।      

এমকে রহমান বলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর গণহত্যার অভিযোগ সন্দোতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে ওই অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের ওই অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করেই প্রসিকিউশন আপিল করবে বলে সমন্বয়ক জানান।

তবে একইসঙ্গে তিনি বলেন, আপিল করার পর প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালের পুরো রায় বিবেচনায় নিয়ে আপিল বিভাগের আদেশ চাইতে পারে। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যয়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় যে কোনো বিষয়ে আপিল বিভাগ আদেশ দিতে পারে।   

মঙ্গলবার রায়ের পর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এক টেলিভিশনে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সেকশন ২১ তুলে ধরে বলেন, সাজা বাড়াতে আপিলের কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত ব্যক্তি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। আর খালাস পেলে সরকার তার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে।

“যেহেতু এখানে আসামি দণ্ড পেয়েছে, সেহেতু এক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের আপিলের সুযোগ নেই। আপিল করতে পারবেন কাদের মোল্লা।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (সংশোধিত) আইনের সেকশন ২১ এ বলা হয়েছে, ৩ নম্বর সেকশনে উল্লেখিত যে কোনো অপরাধে দোষী একজন ব্যক্তি এবং ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দণ্ডিত একজন ব্যক্তি যে কোনো সাজা ও দণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের অধিকার রাখে।

“খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সরকারের আপিলের অধিকার রয়েছে।”

আইনের এমন ব্যাখ্যার কারণে প্রসিকিউশন আদৌ আপিল করতে পারবে কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।  

তবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান মঙ্গলবারই বলেন, যে অভিযোগে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তাকে ভিত্তি ধরে আপিল সম্ভব।

তিনি বলেন, “আইনে বলা হয়েছে, খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। সেটা এক অভিযোগও হতে পারে, আবার পূর্ণ খালাসও হতে পারে।”