‘ইনসাফ পাইনি’

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ‘ন্যায়বিচার’ হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা।

সুলাইমান নিলয়ও সালাহউদ্দীন ওয়াহেদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2013, 06:07 AM
Updated : 5 Feb 2013, 06:07 AM

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ায় তার এ সাজা হয়।

রায় ঘোষণার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রতিক্রিয়া জানান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হনুফা বেগম।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “আমি রাজাকারদের হাতে আটক হয়ে মুগদাপাড়া ক্যাম্পে চার দিন বন্দি ছিলাম। ওই চার দিন এমন কোনো নির্যাতন-নিপীড়ন নেই, যা তারা আমার ওপর চালায়নি। ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে আমার প্রতি অবিচার হয়েছে।”

হনুফা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর। বয়স কম থাকার কারণে অস্ত্র হাতে সরাসরি অপারেশনে অংশগ্রহণ করার অনুমতি পাননি। তার দায়িত্ব ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, রসদ ও তথ্য সরবরাহ করা।

“একাত্তরের জুলাইয়ে আমি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। চার দিন অকথ্য নির্যাতনের পর আধামরা অবস্থায় তারা আমাকে মুগদাপাড়া খালে ফেলে দিয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল জানে না, কিন্তু আমার প্রতিটি অঙ্গ জানে স্বাধীনতা কীভাবে এসেছে,” বলেন তিনি।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে এদিন সকাল ১০টা থেকেই হাই কোর্টের মূল ফটকে জড়ো হন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্যরা।

রায়ের আগ পর্যন্ত তারা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু রায় ঘোষণার পরই মুষড়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন আব্দুর রশিদ।

“আমাদের বাড়ি ছিল ঢাকার লালবাগে। আমি যুদ্ধে যোগদানের পর ’৭১ এর মে মাসে রাজাকাররা আমার বাড়িতে হামলা করে লুটপাট চালায়, আমার বোনকে ধর্ষণ করে। তারপর আমার মা আর বোনের গায়ে পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে,” কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে যান তিনি।

“কাদের মোল্লার মত ঘাতক-রাজাকারের হলে আমার মা-বোনের আত্মা শান্তি পেত,” হতাশা ঝরে এই মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব ওয়ালী আহমেদ বলেন, “আমরা হতাশ। কী কারণে ট্রাইব্যুনাল এই রায় দিল, আমরা বুঝতে পারছি না।

“আমরা এমনটা আশা করিনি। কোনো মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের সন্তানদের পক্ষে এ রায় মেনে নেয়া সম্ভব নয়।”

ট্রাইব্যুনালের এই রায় ‘প্রহসন’- মন্তব্য করে ৭ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা মালেক চৌধুরী বলেন, “কাদের মোল্লার অপরাধ ফাঁসির জন্য যথেষ্ট ছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে।”

একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন মুক্তিযোদ্দা মনিরুজ্জামান মনির, আব্দুল খালেক, শফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে।

২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, রাজাকারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেশের মানুষ এই সরকারকে ভোট দিয়েছিল।

বিচারের রায় এ ধরনের হতে থাকলে মুক্তিযোদ্ধারা আবার মাঠে নামতে ‘বাধ্য’ হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

“এখানে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমরা ইনসাফ পাইনি,” বলেন ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।