যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর হরতালের আট ঘণ্টা আগে রাজধানীর উত্তরায় বাসে দেয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি।
সোমবার রাত ১০টার দিকে আজমপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় তুরাগ পরিবহনের বাসটিতে আগুন ধরানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হরতালের ঘোষণা দিয়ে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের ঝটিকা মিছিল করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছিল।
এর মধ্যেই গাজীপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এই বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। এই আগুন জামায়াতকর্মীরা দিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার নিশারুল আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসটিতে আগুন দেয়া হলে যাত্রীরা সবাই নেমে পড়লেও একজন আটকা পড়েন। তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।”
নিহতের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়দের উদ্ধৃত করে পুলিশ কর্মকর্তা আরিফ বলেন, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা এই আগুন দিয়েছে।
একাত্তরে টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, নিহতের নাম রাসেল মাহমুদ এবং তিনি এবি ব্যাংকের কাকরাইল শাখার কর্মকর্তা ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার রায়ের দিন জানানোর পরপরই একে ‘প্রহসনের’ বিচার আখ্যায়িত করে মঙ্গলবার হরতাল ডাকে দলটি।
হরতালের ঘোষণা দিয়ে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত ও শিবিরকর্মীরা। সেখান থেকে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সন্ধ্যার পর কারওরান বাজারে জামায়াত-শিবিরের ২৫-৩০ জনের একটি দল ঝটিকা মিছিল বের করে। ওই সময় দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলে স্থানীয়রা জানায়।
একই সময়ে মিরপুরের কাজীপাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় শিবির কর্মীরা হরতালের পক্ষে ঝটিকা মিছিল বের করে। সেখানেও বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলে পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ শহিদ জানিয়েছেন।
এই সব বিস্ফোরণের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “হয়ত আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। তবে পুলিশ সতর্ক আছে।”
সতর্কতার মধ্যেও এই সব বিস্ফোরণের ঘটনা তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, “সব জায়গায় তো পুলিশ দেয়া সম্ভব নয়।”
ঢাকার বাইরে সিলেটের বন্দরবাজারে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় শিবিরকর্মীরা। গাজীপুরের টঙ্গী এবং বগুড়ায় কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর হয়েছে।
ফাঁকা রাজধানীর পথ
বোমাবাজি এবং গাড়িতে আগুন দেয়ার পর সোমবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অনেকটাই ফাঁকা দেখা যায়।
গুলশান, মহাখালী, তেঁজগাও, মালিবাগ, শাহবাগ ও নীলক্ষেত এলাকা ঘুরে অন্য দিনগুলোর মতো জনসমাগম দেখা যায়নি।
গুলশান মোড়ের চা দোকানি আনিস মিয়া বলেন, বোমবাজির আশঙ্কায় সবাই আগেই ঘরে ফিরেছে।
রাত ৮টার দিকে গুলশান মার্কেটের সামনে নিজের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকা ব্যবসায়ী নাইমুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিবির ককটেল মারতে পারে। গাড়ি ভাংতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”
তেঁজগাও এলাকার পেট্রোল পাম্প ‘সাউদার্ন অটোমোবাইলসের’ অপারেটর সঞ্জয় জানান, সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতা কম।
“সন্ধ্যার পর থেইক্যা গাড়ি কম আসা শুরু করছে।”
রাত সাড়ে ৮টার দিকে তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল থানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, থানার প্রধান ফটক তালাবদ্ধ।
ভেতরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবল মোবারক কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করে পরিচয় জেনে তারপর লোহার ফটকের তালা খুলে দেন।
থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মঈনুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলা হচ্ছে।”
যুদ্ধাপরাধে আটক শীর্ষনেতাদের মুক্তি দাবিতে বিক্ষোভ থেকে গত কিছুদিন ধরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন মগবাজার এলাকায় যানবাহনের সংখ্যা বেশ কম দেখা গেছে।
হাতিরপুল এলাকার অধিকাংশ দোকান বন্ধ দেখা যায়। হাতিরপুল কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও সেখানে তেমন লোকজন দেখা যায়নি।
সবজি বিক্রেতা আলম বলেন, হরতালের আগের রাতে মানুষ কম থাকে।
“জামাত আর শিবিরের পোলাপান বোমা মারে, গাড়িতে আগুন দেয় বইলা লোকে রাইতে কম বাইর হইছে।”
নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ঢাকা কলেজের সামনের এলাকা ঘুরে সেখানে যানচলাচল কম দেখা যায়।
ঢাকা কলেজের সামনের কাবাব বিক্রেতা আশরাফ বলেন, “হরতালে বোমা হামলার ভয়ে লোকে আগেই বাড়ি চইল্যা গেছে।”