শুমারিতে বেশি হলেও নারী ভোটার কম

দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বছরের জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ ও তার বেশি তাদের নিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ২১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫২ জন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2013, 09:03 AM
Updated : 2 Feb 2013, 09:32 AM

এরমধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬২ লাখ ১ হাজার ৮৭১ ও নারী ৪ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৯৮১।

সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন ২০১১ অনুযায়ী, ১৫ ও তার বেশি বয়সীদের সংখ্যা (বয়স, লিঙ্গ ও আবাসন) ৯ কোটি ১৭ লাখ ৫ হাজার ৯৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৮ ও নারী ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪।

তুলনামূলক পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, এবার দেশের মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশ ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে। নারী-পুরুষের সংখ্যাও প্রায় কাছাকাছি।

তবে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু আদমশুমারিতে ১৫ ও তধোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে নারী প্রায় ১১ লাখ বেশি।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক (আদশশুমারি ও গৃহগণনা) অসীম কুমার দে বলেন, “দেশের মোট জনসংখ্যার নারী-পুরুষ সমানে সমান প্রায়। ভোটারেও তাই। বলা যায়, যোগ্যরাই তালিকাভূক্ত হতে পেরেছে।”

তবে দেশের ভোটারযোগ্য জনসংখার আদমশুমারির তথ্য ও নির্বাচন কমিশনের ভোটারের সংখ্যাকেও স্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।

তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, জনসংখ্যায় ভোটারযোগ্য নারী বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, প্রবাসীদের মধ্যে বেশি থাকছে পুরুষই। আদমশুমারি শুধু দেশের অভ্যন্তরে হওয়ায় প্রবাসী পুরুষদের উল্লেখযোগ্য অংশ শুমারিতে থাকছে না।

বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন। এ জনসংখ্যার ৬১ শতাংশই এবার ভোটার।

এ কর্মকর্তা জানান, ২০১১ সালে আদমশুমারির কাজ শুরু হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ হয় গত ১৬ জুলাই। মোট জনসংখ্যার সঙ্গে ভোটারের তুলনামূলক চিত্র স্বাভাবিকই বলতে হবে।

এর আগে ২০০১ সালের চতুর্থ আদমশুমারিতে মোট জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন। যা ওই জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ।

দশম সংসদে এগিয়ে পুরুষ

নবম সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি থাকলেও দশম সংসদে এগিয়ে থাকছে পুরুষ। অবশ্য দেশের মোট জনসংখ্যায় বরাবরের মতো এবারও পুরুষ এগিয়ে রয়েছে।

বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৫১৮ ও নারী ৭ কোটি ৬১ লাখ ১৭ হাজার ৪৯৭।

বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন বছরের (২০১১-২০১৩) ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ  একসঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ পর‌্যন্ত ৭০ লাখ ১৭ হাজার ৫২১ জন নতুন অন্তর্ভূক্ত(পুরুষ ৪১ লাখ ৯১ হাজার ২০৬ ও নারী ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৩১৫) হয়েছে।

এরপরও যারা বাদ পড়েছে তারা বছরের যে কোনো সময়ে  ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এর আগে ২০০৯-২০১০ সালের হালনাগাদের সময় (মৃতদের বাদ ও নতুনদের অন্তর্ভূক্ত) প্রায় ৪৭ লাখ ভোটার তালিকায় যোগ হয়। এ হালনাগাদে পুরুষ ২৬ লাখ ও নারী ২১ লাখ ভোটার হয়েছে।

সিইসি জানান, পুরো কার‌্যক্রমে মৃত ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৯ জনকে বাদ দিয়ে বর্তমানে সারা দেশের ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ কোটি ২১লাখ ২৯ হাজার ৮৫২ জন।

এর আগে ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে তালিকাভূক্ত (৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন) মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৫৪৯ জন, নারী ৪ কোটি ১২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৯ জন।

এ বছরের ২৫ অক্টোবর থেকে আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দমশ সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।

আগামী মে মাসের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকার মূদ্রণ সম্পন্ন করা যাবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনের জন্য যথাসময়ে মুদ্রণ সম্পন্ন করে ভোটার তালিকা তৈরি থাকবে।

আদমশুমারি ও ভোটারের তারতম্যের বিষয়ে তিনি জানান, এটা কোনো বিষয় নয়। যারাই ভোটারযোগ্য তারাই তালিকাভূক্ত হয়েছে।

নতুন যারা

ইসি ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, আদমশুমারি অনুযায়ী, ১৫-১৯ বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ২৭ লাখ (এরমধ্যে ১৮ ‍ও ১৯ বয়সীরা অবশ্যই আগেই তালিকাভুক্ত)। ওই সময়ের ১৫-১৭ বয়সীরাই নবম সংসদের পর দশম সংসদে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

তবে নবম সংসদ নির্বাচনের পর ভোটার হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ১৫৪ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদমশুমারিতে সাধারণরা ‘গড়পড়তা’ বয়সের তথ্য দিলেও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার প্রবণতায় ভোটার হওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। এক্ষেত্রে হালনাগাদে দীর্ঘ সময় পাওয়ায় অনেকেই যথাযথ প্রমাণপত্র উপস্থাপন করেই ভোটার হয়েছে।

আগের যতো ভোটার

ইসি সচিবালয়ের উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ১৯৭৩ সালে প্রথম ভোটার তালিকায় ছিল ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন ভোটার। ১৯৭৬ সালে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৮ জন ভোটার, ১৯৮৩ সালে ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৬, ১৯৯০ সালে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ১০৮, ১৯৯৫ সালে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৪  ও ২০০০ সালে ৭ কোটি ৪৭ লাখ ২৩ হাজার ৮৫৫ জন ভোটার তালিকাভূক্ত হয়।

২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এক কোটি ৩০ লাখের মতো ‘ভুয়া’ ভোটার অন্তর্ভূক্তি নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচন পরবর্তী ইসির প্রতিবেদন অনুযায়ী- পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের সময় ৩ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৭ জন পুরুষ ও ২ কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮৬ জন নারী ভোটার ছিল। সপ্তম সংসদে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯৪ জন পুরুষ ও ২ কোটি ৭৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪১ জন নারী ভোটার ছিল।

দ্বৈত ভোটার ও অনুপ্রবেশকারীরা যাতে তালিকাভূক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে বরাবরই সচেষ্ট থাকায় ছবিসহ ভোটার তালিকায় কোনো ‘ভুয়া’ ভোটার নেই বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন।