‘ফাঁসি দেখে শান্তি পাব’

আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মিছিল হয়েছে তার জেলা ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে। পলাতক এই ব্যক্তিকে ধরে এনে রায় বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে একাত্তরে নির্যাতিত পরিবারগুলো।

নির্মলেন্দু চক্রবর্তী শংকর, ফরিদপুরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2013, 04:58 AM
Updated : 21 Jan 2013, 04:58 AM

সোমবার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় দেয়ার পরপরই একাত্তরে নিহত ও নির্যাতিতদের পরিবারসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নেমে আসে রাস্তায়।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বড়খাড়দিয়া গ্রামের আবুল কালাম আযাদকে এলাকার মানুষ চেনে বাচ্চু রাজাকার নামে।

একাত্তরে নগরকান্দা ছাড়াও সদর ও সালথা উপজেলায় বিস্তৃত ছিল আযাদের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর তৎপরতা।

যে কয়টি অপরাধে আযাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, তার মধ্যে একটি হল সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাসকে হত্যা।

রায়ের খবর শুনে চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী জোছনা রানী দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার স্বামীর হত্যাকারীর ফাঁসি দেখে আমি শান্তি পাব।”

চিত্তরঞ্জন দাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, “আবুল কালাম আজাদ নিজ হাতে গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি এতিম হয়ে জন্ম নিয়েছি।

৪১ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পেয়ে আনন্দের সঙ্গে অশ্রুও ঝরছিল গোপালের চোখ থেকে।

“সরকারের কাছে দাবি, পলাতক আবুল কালাম আযাদকে ধরে এনে তার রায় কার্যকর করা হোক। এতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।”

১৯৭১ সালের ৩ জুন আযাদের নেতৃত্বে ১০-১২ জন রাজাকার সদস্য হিন্দুপাড়ায় লুটপাট চালিয়ে চিত্তরঞ্জন দাসকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

একাত্তরে আযাদের হাতে নিহত সালথা উপজেলার পুরুরা গ্রামের মাধব চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ভক্তরঞ্জন বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পেয়েছি। এখন সরকারের কাছে অবিলম্বে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।”

১৯৭১ সালের ১৬ মে আযাদ ১০-১২ জন রাজাকার সদস্যকে নিয়ে পুরুরা নামপাড়া গ্রামে যান এবং মাধব চন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা ফায়েজুর রহমান রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবুল কালাম আযাদ মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তার সাজা হয়েছে। তবে এই রায় কার্যকর করতে হবে।”

রায়ের পর ফরিদপুর শহর, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা সদরে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।

রায় ঘোষণার পরপরই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জায়নুল আবেদীন এবং ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবু বক্তব্য দেন।

এই সমাবেশ থেকে পলাতক মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা  পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

চার দশক আগে বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামকে দমাতে ব্যাপক গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ হয়।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ গত বছর ২ সেপ্টেম্বর আযাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, যাতে লুট, ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়।

আযাদ পলাতক থাকায় এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতেই মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়।