গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে সাগরে তার রেমাঞ্চকর অভিযানে তোলা ছবি নিয়ে রাজধানীতে একটি প্রদর্শনীও হয়েছে।
সম্প্রতি থাইল্যান্ডে স্কুবা ডাইভিংয়ের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো সাগরে ডুব দিয়ে তিনি ক্যামেরাবন্দি করেছেন জলতলের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
গত বুধবার সেই অভিজ্ঞতার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনাতে গিয়ে শরীফ সরওয়ার বলেন, কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখতে প্রতি বছর প্রচুর বিদেশি পর্যটক এ দেশে আসেন। আর সাগরে স্কুবা ডাইভিংয়ের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা গেলে, বঙ্গপোসাগরের গভীরে লুকানো সৌন্দর্য বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে পারলে আরো বহু পর্যটক এ দেশে আসতে আগ্রহী হবেন।
“তবে সবার আগে সাগরকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে হবে”, বলেন এই আলোকচিত্রী।
সংবাদপত্রে কাজের সূত্রে শরীফ সরওয়ারকে প্রায় চৌদ্দ বছর ক্যামেরা হাতে ঘুরতে হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। দেশের বহু ঘটনারই সাক্ষী হয়েছেন তিনি এবং তার ক্যামেরা। তার জবানিতেই শোনা যাক সাগরের ডাকে তার সাড়া দেয়ার গল্প।
পানির নিচে ছবি তোলার ইচ্ছা কেন হলো?
অনেক আগে থেকে ডিসকভারি বা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে সাগরের নিচে ছবি তোলার দৃশ্য দেখে পুলকিত হতাম। ভাবতাম আমাদের দেশে কবে এ ধরনের কাজ হবে। ২০০৯ সালে দৈনিক যায়যায়দিন ছাড়ার পর অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। সে সময় মনে হলো- চেষ্টা করে দেখাই যাক না, পারি কি না।
প্রাথমিক বিষয়গুলো জানলেন কীভাবে? প্রস্তুতিই বা কীভাবে নিলেন?
বই আর পত্রিকা থেকে জানার চেষ্টা করলাম গভীর সমুদ্রে ফটোগ্রাফির বিষয়ে। ইন্টারনেট থেকে জানতে পারলাম এ ধরনের ফটোগ্রাফির জন্য বিশেষ ধরনের ক্যামেরা লাগে। পরে জমানো টাকা দিয়ে ক্যানন জি-১২ মডেলের একটি ক্যামেরা কিনলাম। আলোকচিত্রী সৈয়দ জাকির হোসেনের কাছে পেলাম ক্যামেরাকে পানি থেকে বাঁচানোর বিশেষ কেসিং।
এরপর সেন্ট মার্টিনে গিয়ে ‘ওশানিক স্কুবা ডাইভিং সার্ভিস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেলাম, যারা স্কুবা ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষন দেয়। ওই প্রশিক্ষণ নিয়েই গত বছর প্রথমবার ক্যামেরা নিয়ে ডুব দেই।
জোয়ার-ভাটার সময় হিসেব করে ২০১২ এর ফেব্রুয়ারিতে নেমে পড়লাম সাগরে। চুক্তি হয়েছিল নয় দিনের। প্রতিবার ডাইভিংয়ে খরচ ধরা হলো তিন হাজার টাকা।
প্রথমবার ডুব দিয়ে ছিলাম মাত্র পাঁচ থেকে সাত মিনিট। এরপর আবার ডুব দেই। এভাবে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হই।
সাগরের নিচের যে সৌন্দর্য্য, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমার মতে, সেন্ট মার্টিনের নব্বই ভাগ সৌন্দর্যই আসলে সাগরের নিচে।
পানির নিচে এতো রঙ, এতো বৈচিত্র! সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দ্বিতীয় অভিযানে কী দেখলেন?
থাইল্যান্ডে আমি মোট ছয়টি দ্বীপে (আন্দামান সাগর) ডাইভ দিয়েছি। ছবিও তুলেছি। সেখানে পর্যটকদের জন্য দ্বীপগুলো থেকে বেশ দূরে মাঝ সমুদ্রে বিশেষ কিছু অঞ্চলে ডাইভিংয়ের ব্যাবস্থা আছে। পর্যটকদের জন্য ওরা খুব পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ব্যাবস্থা করেছে।
আমাদের দেশে সাগরের তলদেশ সম্বন্ধে কোনো সমীক্ষা নেই। আপনি যদি ডাইভ করতে চান, এ বিষয়ে কোনো তথ্যই আপনি পাবেন না। অথচ থাইল্যান্ডের চেয়ে আমাদের এখানে সাগরের তলদেশ মোটেও কম সুন্দর নয়। ওখানে তো কৃত্রিমভাবে অনেক কিছু তৈরি করা হয়ে। আর আমাদের এখানে সবই একদম আদীম, প্রাকৃতিক।
সেন্ট মার্টিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি যেখানেই নামেন না কেন, তার রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
আমি তো আগেই বলেছি, আমরা পানির উপরে যে সৌন্দর্য খুঁজি তার নব্বই ভাগই রয়েছে পানির নিচে। আমরা যদি এখানকার সাগরের তলদেশের রূপ তুলে ধরতে পারি, তাহলে প্রচুর পর্যটক পাব, যারা শুধু স্কুবা ডাইভ করতেই আসবে। আর এ খাত থেকে প্রচুর বিদেশি মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।
তবে এ ক্ষেত্রে সাগরকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে। আমাদের অসচেতনতার কারণে সাগর আজ হুমকির মুখে। এ বিষয়ে সরকারকেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
সাগর তলদেশের নয়নাভিরাম রূপ নিয়ে আমি ক্যামেরায় আরো কাজ করতে চাই।
এখন পর্যন্ত আমি আমার জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে সাগর তলের ছবি তুলছি। কারো সাহায্য নেইনি। আমাদের দেশের কর্পোরেট হাউসগুলো অনেক কিছুতেই সাহায্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের একটি কাজে আমি তাদের কাউকে সাথে পাইনি।
আমি যে ছবি তুলেছি তা হয়তো আরো ভালোভাবে তোলা সম্ভব। বিদেশে এ ধরনের কাজের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার কিছুই নেই। তবে আমি হেরে যাইনি, সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
[এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিগুলো শরীফ সরওয়ারের দ্বিতীয় অভিযানে তোলা।]