‘পেপার স্প্রে’ বন্ধে সরকারকে লিগ্যাল নোটিস

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেপার স্প্রে বন্ধ করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2013, 07:10 AM
Updated : 17 Jan 2013, 07:52 AM

বৃহস্পতিবার রেজিস্টার্ড ডাকযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং র‌্যাবের পরিচালককে এই নোটিস পাঠানো হয় বলে জানান অ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভূইয়া।

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এই লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ‘অমানবিকভাবে বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক’ পেপার স্প্রে বন্ধ করতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। তা উপেক্ষা করা হলে জনস্বার্থে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হবে।

একলাছ উদ্দিন বলেন, “কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকারবিরোধী বিভিন্ন সমাবেশে এমনকি পেশাজীবী শিক্ষকদের উপরও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পেপার স্প্রে নামে এক ধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে ইতিমধ্যে আক্রান্ত মানুষরা চোখের কর্নিয়াসহ বিভিন্ন রোগের উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছে।”

বামপন্থী দলগুলোর বুধবারের হরতালে পুলিশের পেপার স্প্রের শিকার হন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের পেপার স্প্রে ব্যবহার এটাই প্রথম নয়, এর আগে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপরও তা ব্যবহার করেছে পুলিশ।

পেপার স্প্রে হাতে পুলিশ

পুলিশের সর্বসাম্প্রতিক এই ‘হাতিয়ার’ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে তা নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে আক্রান্তরা। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি কোনোভাবেই প্রাণ সংহারী নয়।

লিগ্যাল নোটিশে দাবি করা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ৬১টি মৃত্যুর প্রাথমিক কারণের মধ্যে পুলিশের পেপার স্প্রে ছিটানো অন্যতম। ইউএস আর্মির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পেপার স্প্রের প্রতিক্রিয়ার কারণে দেহে ক্যান্সার হতে পারে।

এছাড়া এটা হৃদযন্ত্র, রক্ত প্রবাহ, ফুসফুস, স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণ সংহারের কারণ হতে পারে বলেও ওই গবেষণায় বলা হয়।

একজন নাগরিকের সুস্থভাবে বাঁচার এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে সুনির্দিষ্ট রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এই আইনজীবী।

পেপার স্প্রে বিভিন্ন দেশে ওসি স্প্রে (ওলেওরেসিন ক্যাপসিকাম), ওসি গ্যাস ও ক্যাপসিকাম স্প্রে নামেও পরিচিত।

এর মধ্যে এমন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা চোখে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে। এই গ্যাসের সংস্পর্শে আসামাত্র চোখে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

নর্থ ক্যারোলাইনা মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি স্প্রে বা পেপার স্প্রেতে পানি, অ্যালকোহল, কার্বনডাইঅক্সাইড, হ্যালোজেনেটেড হাইড্রোকার্বন (ফ্রেয়ন, টেট্রাক্লোরোথাইলিন, মিথাইলিন ক্লোরাইড) রাসায়ানিকও ব্যবহার করা হয়।

এসব রাসায়নিকের প্রভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত হয়ে আক্রান্তের আকস্মিক মৃত্যুও হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

আশির দশকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নেদারল্যান্ডস অ্যান্টিলিজের পুলিশ বাহিনী প্রথম এই স্প্রে ব্যবহার করে, যা মূলত জার্মান পুলিশের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।