পরিচয় সঙ্কটে ইসি

নির্বাচন কমিশনের নাম নিয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে কমিশনারদের মধ্যে, ফলে তাদের একেকজন একেক নামে পরিচয়পত্র ছাপিয়েছেন। 

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2013, 08:03 AM
Updated : 9 Jan 2013, 08:03 AM

সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হিসেবে পরিচিত হলেও প্রায় এক বছর আগে দায়িত্ব নেয়া বর্তমান কমিশনের কমিশনাররাই প্রথম এর পরিচয় ভিন্নভাবে লিখছেন।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ভিজিটিং কার্ডে লিখেছেন- ‘ইলেকশন কমিশন ফর বাংলাদেশ’; নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক লিখেছেন- ‘নির্বাচন কমিশন’; নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী লিখেছেন- ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কার্ডে নামের পরেই চিফ ইলেকশন কমিশনার, বাংলাদেশ লেখা রয়েছে।

এর পাশাপাশি জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত নবম জাতীয় সংসদের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’।

তবে কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.ecs.gov.bd) পরিচিতিতে বলা হয়েছে ‘বাংলাদশ নির্বাচন কমিশন’। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম সাখাওয়াত হোসেনের ভিজিটিং কার্ডে তাই লেখা থাকত।

একেক কমিশনার একেক পরিচয় দেয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি করবে বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাধীনতার পর এত বছর ধরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন লেখা হয়ে আসছে, এখনো তাই থাকা উচিত।”

‘ইলেকশন কমিশন ফর বাংলাদেশ’ বা ‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’– এমন লেখার চেয়ে অতীতের মতো এখনো ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’ লেখার পরামর্শ দেন অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তা।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বরাবরই ইসি সচিবালয়ের কাগজপত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন-এমন লেখা হত। এখন সব কাগজপত্রে বড় ফন্টে নির্বাচন কমিশন, পরের লাইনে বাংলাদেশ; পরে ছোট ফন্টে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় লিখতে হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ও আবদুল মোবারকের দাবি, সংবিধান অনুসরণ করেই তারা নির্বাচন কমিশনের নাম নতুনভাবে লিখছেন।

এই বিষয়ে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাম হবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এর ভিন্ন হলে সংবিধান অনুসরণ হলো না।”

‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’ লেখা সমীচীন নয় বলেও মনে করেন এই আইন প্রণেতা।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “সংবিধানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর কথা বলা হয়েছে, ইসির বিষয়েও তাই হবে।”

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে ‘বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে’ বলা রয়েছে। ইসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ওই অনুচ্ছেদের আওতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুশীল সমাজের সঙ্গে ইসির সংলাপে ‘নাম বিভ্রাট’ নিয়ে সমালোচনা ওঠে।

পরে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা কোনো পরিবর্তন নয়, যেমন আছে তেমনি থাকছে।”

তবে ‘নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ’ ব্যাকরণগতভাবে ‘সঠিক’ বলে তা ‘শুদ্ধ’ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।