বিতর্ক নিরসনে ইসির ভূমিকা চান সাবেক কমিশনার

সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন নিয়ে চলমান বিতর্কের অবসানে নির্বাচন কমিশনকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করেন একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2013, 04:43 AM
Updated : 3 Jan 2013, 04:43 AM

সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন নিয়ে চলমান বিতর্কের অবসানে নির্বাচন কমিশনকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করেন একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার।

এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী প্রস্তাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন তিনি।

দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিদ্যমান নির্বাচনী আইনের (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও) সংশোধনী অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। নতুন বছরের শুরুতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সংলাপেও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে জোর দিয়েছে কয়েকটি দল। আইন সংস্কার নিয়ে নতুন করে সংলাপ না করলেও এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী ও সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছে কমিশন।

এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করে আরপিওতে বড় ধরনের সংস্কার এনেছিল। এবারও আইন সংস্কারের আগে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

অবশ্য নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, সীমানা পুননির্ধারণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা নিয়ে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করলেও আইন সংস্কার বিষয়ে তাদের সংলাপ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আরপিও সংস্কারের প্রস্তাব গুছিয়ে এনেছি। সিইসির সঙ্গে আরেকদফা বৈঠক করলেই বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে যাবে। জানুয়ারির মধ্যে প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের। এই স্বল্প সময়ে সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না।”

তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ( শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) পদোন্নতি- বদলিসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা রাখার কথা বলা হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। তবে সুনির্দিষ্ট করে কোনো মন্ত্রণালয়ের নাম উল্লেখ করা হবে না।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসেছে। সর্বশেষ গাজীপুর উপ নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন না করায় বর্তমান কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি। গত নভেম্বরের এক চিঠিতে ইসির স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে দলটি।

নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া ২৯টি দলের মধ্যে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করার দাবির পাশাপাশি আরপিওতে এ বিষয়ে সংশোধনী আনার প্রস্তাব রাখে।

মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও সিপিবি সংলাপে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদেরও প্রয়োজন হয়। এজন্য গণপ্রতিনিধিদত্ব আদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাসমূহ’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে।

বর্তমান সরকার আরপিওর সেই সংশোধনী সংসদে পাস করার সময় শব্দটি বাদ দেয়। এতে উপ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সম্ভব হয়নি।

“আমরা বিদায় নেয়ার আগে সংশোধনীর প্রস্তাবে আবারও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। কিন্তু সরকারের কাছে পাঠাতে পারিনি। আশা করি বর্তমান কমিশন এ বিষয়টি অব্যাহত রাখবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কমিশন এ উদ্যোগ না নিলে তাদেরকে বিতর্কের মধ্যে পড়তে হবে।”

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, সুপারিশ করার পরও আইনমন্ত্রণালয়ের ভেটিং, মন্ত্রিপরিষদ সভায় আলোচনা শেষে সংসদে শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর বিষয়টি না রাখলে তার দায় কমিশনের ওপর বর্তাবে না।

অবশ্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের কথা না থাকলেও এর আগে বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন করে নির্বাচন হয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে কমিশনকে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে সেনাবাহিনী চাইতে হয়।

“আইনে বিষয়টি থাকলে তা এক প্রকার বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। এ জন্যে মন্ত্রী ও সংসদ সচিবালয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক সম্প্রতি অতীতের সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত ফাইল তলব করেছেন বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান।

কমিশনে উপস্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়, আরপিওতে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভক্ত থাকায় নবম সংসদে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের মাধ্যমে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯) আইনে কিছু কিছু এলাকায় ও চট্টগ্রামে সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত আইনে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভক্ত করা হয় নি। এতে হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ উপ নির্বাচনে ফৌজদারি কার্যবিধি (১২৯/১৩০) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু সিভিল পাওয়ার এর ৭ম ও ১০ অনুচ্ছেদ মেনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সেনা মোতায়েন না হওয়ায় পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে শেষ পর্যন্ত র্যা ব নিয়োগ করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে নির্বাচনের সময় কিছু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কমিশনের হাতে দেয়ার দাবি জানালেও তাতে আপত্তি রয়েছে কমিশনের। কমিশন মনে করে, যেসব মন্ত্রণালয় ইসি সংশ্লিষ্ট নয়, তাদেরও এতে সম্প্ক্তৃ করলে মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।

নির্বাচনকালীন অপরাধের শাস্তি বিধানের সুবিধার্থে সংশোধনীর খসড়ায় কারাদণ্ডের সঙ্গে জরিমানার অর্থও উল্লেখ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।

তিনি বলেন, “আগে আইনে জরিমানার কথা বলা ছিল। তাতে বিচারিক হাকিমরা জরিমানা করতে পারলেও পরিমাণ উল্লেখ না থাকায় নির্বাহী হাকিমদের এ নিয়ে অসুবিধায় পড়তে হতো। এবার সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার জরিমানার প্রস্তাব রাখা হবে। তাতে যে কোনো পরিমাণ অর্থদণ্ড দিতে পারবেন নির্বাহী হাকিম।”