পদ্মা দুর্নীতি:মোশাররফ-ফেরদৌস ৭ দিনের রিমান্ডে

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান দুই আসামি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী মো. ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2012, 01:43 AM
Updated : 27 Dec 2012, 01:55 AM

 পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান দুই আসামি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী মো. ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম বৃহস্পতিবার ওই দুই জনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।

শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সহিদুল ইসলাম সাত দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।

হাই কোর্ট বুধবার মোশাররফ ও ফেরদৌসের জামিন আবেদন ফিরিয়ে দেয়ার পর রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেন দুদক কর্মকর্তারা।

হাই কোর্টের অবকাশকালীন বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এই দুই জনের জামিন আবেদনের শুনানি না করে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে উত্থাপন করতে বলে।

দুদকের পরিচালক তাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আগে থেকেই তাদের অভিযান চলছিল। দুই আসামি হাই কোর্টে গেছেন খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে তারা শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর মোশাররফ ও ফেরদৌসকে নিয়ে যাওয়া হয় দুদক কার্যালয়ে। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাতে তাদের রাখা হয় ধানমন্ডি থানায়।

সকালে দুদক কার্যালয়ে নিয়ে আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদের পর এই দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে।

কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় সাত জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার পর সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওএসডি করা হয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সাত আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় যাদের মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী(নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌসও রয়েছেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, “আসামিরা পারস্পারিক যোগসাজসে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ এর অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা দণ্ডবিধির ১৬১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

এসএনসি লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ‘ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হতো’ বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্ব ব্যাংক।

দুদক এরপর তদন্ত শুরু করলেও সরকারের সঙ্গে মতভেদ না কাটায় গত জুন মাসে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় বিশ্ব ব্যাংক সিদ্ধান্ত বদলায়।

তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্যানেল দুদকের তদন্ত পর্যবেক্ষণে দুই দফা ঢাকা সফর করে।

এই পর্যবেক্ষক প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।