জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চায় আ.লীগ, বিএনপির ‘না’

নিষিদ্ধ করা নয়, জনমত ও সামাজিক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে জামায়াতের সহিংসতা মোকাবেলা সম্ভব বলে অভিমত এসেছে বিবিসির সংলাপে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2012, 04:41 PM
Updated : 24 Nov 2012, 04:41 PM
ঢাকা, নভেম্বর ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সহিংস কর্মকা-ের জন্য ‘প্রয়োজনে’ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে সরকারের একজন মন্ত্রী মত দিলেও বিএনপির একজন নেতা বলছেন, ভিন্নমত প্রকাশে বাধা সহিংসতার জন্ম দেয়।
জনমত গ্রহণ ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেও অভিমত এসেছে একটি গণমাধ্যমের সংলাপে।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁও এলজিইডি মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠানে পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবির কর্মীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত কি না এমন প্রশ্ন রাখা হয়।
জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতা, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ ও সাধারণ দর্শকরা মতামত দেন।
খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সহিংস রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানান।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর তারা (জামায়াত) যেভাবে আক্রমণ করছে, তাদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাদেরকে হত্যার চেষ্টা করছে, এ দলকে যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে তাদেরকে আমরা নিষিদ্ধ করবো কি করবো না।”
“যদি তারা তাদের এই সহিংস কর্মকা- বাদ না দিয়ে তাদের ধারা না বদলায় তাহলে তাদেরকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।”
যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে চলতি মাসের শুর” থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আসছে জামায়াত-শিবির। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের গাড়িবহরও তাদের হামলার মুখে পড়ে। এ ছাড়া জয়পুরহাটে এক পুলিশ সদস্যের গায়ে আগুন দেয় ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, “সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে তাহলে গত চার বছরে সারাদেশের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য আগে তাদেরকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে না কেন?
“আমি মনে করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত।”
এ পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই দেখেছি যতই ভিন্নমত প্রকাশের পথ রুদ্ধ হয়েছে ততই এসব সহিংসতার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।”
সংলাপে উপস্থিত মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর সাধারণ সম্পাদক আদিদুর রহমান বলেন, “একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি কোনো সংগঠন বা দলকে নিষিদ্ধ করা সমর্থন করতে পারি না। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে তাদের দমন করতে গিয়ে রাষ্ট্র যেন সন্ত্রাসীর ভূমিকা না নেয়।”
একই প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, “নিষিদ্ধ করে কোনো ফলাফল পাওয়া যায় না। বরং জনমত গ্রহণ করেই সামাজিক সচেতনতা বাড়তে হবে।”
পুরো সংলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক আকবর হোসেন। অনুষ্ঠানে দর্শকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে তাদের মতামতও প্রকাশ করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএমআর/এএল/০৩৫৫ ঘ.