হিন্দু গ্রামে হামলা, পুলিশ নির্বিকার

বাগেরহাটের ফকিরহাটে হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রামে সন্ত্রাসী হামলার পর স্থানীয় ইউএনও গ্রামবাসীর নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও তাতে পুলিশের টনক নড়ছে না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2012, 07:45 AM
Updated : 31 July 2012, 07:45 AM
বাগেরহাট, জুলাই ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বাগেরহাটের ফকিরহাটে হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে। ভাংচুর হয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যসহ দুই ব্যক্তির বাড়ি।
নলধা মৌভোগ ইউনিয়নের নলধা ব্রহ্মডাঙ্গা গ্রামে সোমবার রাতে এই হামলার পর ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ পাল পুলিশ মোতায়েনের সুপারিশ করেছেন। একই দাবি জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মোহম্মদ মহসীনও।
তবে ফকিরহাট থানার ওসি লিয়াকত হোসেন বলেছেন, পুলিশ মোতায়েনের পরিস্থিতি হয়নি।
এই বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নিয়ামত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নলদা ব্রহ্মডাঙ্গা গ্রামে হামলাকারীরা চি‎িহ্নত সন্ত্রাসী এবং দুর্ধর্ষ প্রকৃতির।
“তারা এলাকার হিন্দু সম্ú্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, “এদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে ফকিরহাট থানার ওসিকে বিভিন্ন সময় জানানো হলেও তাদের তৎপরতা এখনো কমেনি।”
সোমবারের হামলায় আহতরা হলেন- সুব্রত রায় (৪০), তার স্ত্রী বাসন্তী রায় (৩৪), তাদের স্কুলপড়–য়া মেয়ে সুবর্ণা রায় (১৩), স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মকর মণ্ডলের ছোট ভাই তাপস মণ্ডল (২২), পলাশ মণ্ডল (৩০) ও প্রহ্লাদ মণ্ডল (১৯)।
এর মধ্যে সুব্রত ও তাপসকে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার ব্রহ্মডাঙ্গা মাঠে স্থানীয় কিশোরদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলাকালে বিপ্লব ও বাবুল শেখ নামে দুই কিশোরের সঙ্গে স¤্রাট ও ঝংকার নামে দুই হিন্দু কিশোরের মারমারি হয়। তার জের ধরেই সোমবারের হামলা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মোহম্মদ মহসীনসহ গ্রামের বাসিন্দারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবারের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হলেও সোমবার রাত ৮টার দিকে নলধা গ্রামের শহীদ মাতুব্বর ও ছুটে সরদারের নেতৃত্বে অন্তত ৫০ জন লোক লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত নলধা ব্রহ্মডাঙ্গা গ্রামে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মকর মণ্ডল এবং সুব্রত রায়ের বাড়ি ভাঙচুর করে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ওই রাতেই ফকিরহাট থানার ওসি লিয়াকত হোসেনকে ঘটনা জানিয়ে পুলিশ মোতায়েনের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাতে ফল না হওয়ায় তারা আতঙ্কে ভুগছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ পাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেন। একইসঙ্গে তিনি গ্রামবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফকিরহাট থানার ওসিকে চিঠি দিয়েছেন।
এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মহসীনও এলাকায় পুলিশ মোতায়েনের জন্য ওসির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
দেবপ্রসাদ পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সোমবার রাতে ফকিরহাট থানার ওসি আমাকে জানিয়েছিলেন। আজ দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে হামলার শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।
“পার্শ্ববর্তী গ্রামের শহীদ ও ছুটে নামে দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।”
দেবপ্রসাদ জানান, তিনি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘুরে আসার পর মঙ্গলবার বিকালে ফকিরহাট থানার ওসি লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে ওসি বলেন, “স্থানীয়দের মাধ্যমে তাদের চি‎িহ্নত করা হচ্ছে।”
ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এইচএএইচ/এমআই/১৯৪১ ঘ.