মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায় থাকছেন ৭৫ বিদেশি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে ৭৫ জন বিদেশি আগামী মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা নেবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2012, 10:22 AM
Updated : 24 March 2012, 10:22 AM
ঢাকা, মার্চ ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে ৭৫ জন বিদেশি আগামী মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা নেবেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা দিতে ১৩২ জন বিদেশি নাগরিকের যে তালিকা স¤প্রতি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে তাদের ১১০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আমন্ত্রিতদের মধ্যে ৭৫ জন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বা প্রতিনিধি পাঠিয়ে এ সম্মাননা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি এম তাজুল ইসলাম শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
এ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সংসদ সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আগামী ২৭ মার্চ (মঙ্গলবার) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জমকালো অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মাননা পদক তুলে দেবেন।
তাদের হাতে জাতীয় স্মৃতি সৌধের প্রতিকৃতি খচিত সোনায় মোড়ানো রূপার পাতের একটি স্মারক তুলে দেওয়া হবে এবং সিল্কের কাপড়ে থাকবে অভিনন্দন বার্তা।
দীপু মনি বলেন, “তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিল এবং তাদের সনাক্ত করতে আমরা একটি জাতীয় কমিটি করেছিলাম।”
“আমরা ৫৬০ জনের একটি তালিকা করেছিলাম এবং দ্বিতীয় দফায় ২৭ মার্চ সম্মাননা প্রদানের জন্য ১৩২ জনকে বাছাই করি।”
প্রথম দফায় গত জুলাইয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন তার পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশিদের সম্মাননা প্রদানে গঠিত জাতীয় কমিটি গত দুই বছর ধরে কাজ করেছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী
দ্বিতীয় দফায় যাদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রয়েছেন।
তাকে সম্মাননা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মানিক সরকার একজন তরুণ নেতা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন।
এ সময় তাজুল ইসলাম যিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মানিক সরকারের ভূমিকার তিনি নিজেও একজন সাক্ষী।
“যখন আমি ত্রিপুরা গিয়েছিলাম তখন তিনি আমার চেয়ে দুই থেকে পাঁচ বছরের ছোটো ছিলেন। আমি দেখেছি, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দ্বারে দ্বারে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সহায়তা চেয়েছেন।”
“তাছাড়া, আমরাই সিদ্ধান্ত নেব কাদের আমরা সম্মাননা দেব, অন্য দেশের মানুষ সে সিদ্ধান্ত নেবে না।”
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানিক সরকারের দলের ভূমিকা উল্লেখ করে তাকে ম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি ত্রিপুরায় বিতর্ক তুলেছেন সেখানকার কংগ্রেস নেতারা।
সম্মাননা পাচ্ছেন যারা
সম্মাননার জন্য চূড়ান্ত হওয়া তালিকায় ভারতীয় জনগণ ও মিত্রবাহিনী ছাড়াও ৪৩ জন ভারতীয়, ২১ জন মার্কিন, ১০ জন রুশ ও ১২ জন ব্রিটিশ নাগরিকও রয়েছেন।
ভারত: শচীন্দ্র লাল সিংহ, রাজ্যেশ্বর রাও, সিদ্ধান্ত শংকর রায়, পি এ সাংমা, বিচারপতি সা’দত আবুল মাসুদ, মহারানী বিভা কুমারী দেবী, প্রফেসর দিলীপ চক্রবর্তী, সমর সেন, দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায়, পণ্ডিত রবিশংকর, ওস্তাদ আকবর আলী খাঁ, মাদার তেরেসা, ওয়াহিদা রহমান, সুনীল দত্ত, জে পি নারায়ণ, জ্যোতি বসু, গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, অন্নদাশংকর রায়, জগজীবন রাম, অরুন্ধতি ঘোষ, ভূপেশ গুপ্ত, কাইফি আজমী, ভূপেন হাজারিকা, অ্যাডভোকেট সুব্রত রায় চৌধুরী, ফিল্ড মার্শাল এসএএম মানেকশ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়েক আলবার্ট এক্কা পরমী বীরচক্র, নারায়ণ দেশাই, মানিক সরকার, আইপি গুপ্ত, জি বি হাসপাতালের সার্জন সুপারিনটেন্ডেন্ট ডা. রথিন দত্ত, রওশন আরা বেগম সামা, দশরথ দেব বর্মন, লতা মুঙ্গেশকর, ডিপি ধর, জেনারেল উবান, গোলক মজুমদার, পিএন হাকসার, ড. কিরণ সিং, সরদার শরণ সিং, শরৎ চন্দ্র সিংহ এবং ভারতীয় জনগণ ও মিত্রবাহিনী।
রাশিয়া: নিকোলাই ভিক্টোরোভিচ পোডগরনি, আঁদ্রে গ্রোমিকো, ইয়াকভ আলেকজান্দ্রোভিচ মালিক, আলেক্সি নিকোলেভিচ কোসিগিন, প্রফেসর ভ­াদিমির স্ট্যানিস, লিওনেড ব্রেজনেভ, নিকোলাই ফিরোবিন, আনাতলি ডবরিনিন, অ্যাডমিরাল জুয়েনকু ও তার দাল এবং সিপিএসইউ-এর ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পলিব্যুরো।
যুক্তরাষ্ট্র: সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডি, রিচার্ড টেনলর, প্রফেসর রবার্ট ডরফিনান, অ্যানা ব্রাউন টেনলর, আর্চার কে ব্লাড, লিয়ার লেভিন, ফাদার উইলিয়াম রিচার্ড টিম, সিনেটর ফ্রেড রয় হেরিস, টমাস ডাইন, ডা. জোসেফ গার্স্ট, সিনেটর ফ্রাংক চার্চ, উইলিয়াম গ্রিনো, এডওয়ার্ড সি মেসন, প্রফেসর এডওয়ার্ড সি ডিকম জুনিয়র, ডেভিড ওয়াইজব্রড, অ্যালেন গিনসবার্গ, সিনেটর উইলিয়াস স্যাক্সবি, সিনেটর জর্জ ম্যাকগাভার্ন, কংগ্রেসম্যান মর্নেলিয়াস গ্যালাগার, শহীদ ফাদার উইলিয়াম ইভান্স, প্রফেসর জে কেনেথ গলব্রেথ ও ফাদার ইউজেন হোমরিচ।
ব্রিটেন: স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড জর্জ হিথ, লর্ড হ্যারল্ড উইলসন, লর্ড রিচার্ড ডেভিড শোর, মাইকেল বার্নস, সায়মন ড্রিং, জর্জ হ্যারিসন, ব্র“স ডগলাস মান, জুলিয়াস ফ্রান্সিস, পল কানেট, ইলেন কানেট, বিমান মল্লিক ও মার্ক টালি।
যুগোশ্লাভিয়া: মার্শাল জোসেফ টিটো।
ইটালি: ফাদার মারিও ভ্যারোনিচি।
জাপান: তাকাশি হায়াকাওয়া, প্রফেসর ইওসি নারা, কাতামাসা সুজুকি, নাওয়াকি উসুই।
নেপাল: ড. রাম রামন যাদব, বি পি কৈরালা।
কিউবা: ফিদেল কাস্ত্রো।
আর্জেন্টিনা: ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, হোর্হে লুইস বোর্হেস।
ভেনিজুয়েলা: কার্দেনাল হোসে উমবের্তো কিনতারো
স্ইুজারল্যান্ড: প্রফেসর জ্যঁ জিলার এমপি।
ভুটান: জিগমে দর্জি ওয়াংচুক।
সুইডেন: ওলফ পামে, প্রফেসর গানার মিরডাল
ডেনমার্ক: ড. কার্সটিন ওয়াস্টার গার্স্ট।
মালয়েশিয়া: ড. এ সুরিয়ান।
শ্রীলংকা: স্যার সেনারতœ গুণবর্ধন।
নেদারল্যান্ডস: ডমসেস কিনটেন ওয়াটে বাগ।
দক্ষিণ কোরিয়া: হং সুক জা।
পোল্যান্ড: অগাস্ট জালেস্কি।
ভিয়েতনাম: মাদার বিন।
জার্মানি: উইলি ব্রান্ট, বারবারা দাশগুপ্ত, সুনীল দাশগুপ্ত, এরিক হোয়েনকার।
অস্ট্রেলিয়া: উইলিয়াম এ এস ওরিল্যান্ড বিপি।
অস্ট্রিয়া: রুনো ক্রেইস্কি।
কানাডা: পিয়ার ট্রুডো।
আয়ারল্যান্ড: শন ম্যাকব্রাইড, ব্যারিস্টার নোরা শেরিফ, কিরিল্লোউইচ কোস্কই (মার্শাল অব সোভিয়েট ইউনিয়ন ১৯৭১)।
সংগঠন/প্রতিষ্ঠান: জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর, বিবিসি (ব্রিটিশ), আকাশবাণী (ভারতীয়), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি, রমেশচন্দ্র ও বিশ্ব শান্তি পরিষদ, অক্সফাম (ব্রিটিশ), আইসিআরসি, আঁদ্রে মারলো (ফরাসি)।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/এএইচ/পিডি/২২২০ ঘ.