ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি বন্ধে নির্দেশ

সালিশ ও ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2012, 11:05 AM
Updated : 11 March 2012, 11:05 AM
ঢাকা, মার্চ ১১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সালিশ ও ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় এক গৃহবধু ও তার স্বামীর বন্ধুকে দোররা মারার অভিযোগে আদালতের দেওয়া স্বতপ্রণোদিত রুলের শুনানিতে রোববার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
আদেশে সালিশ ও ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সব ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় একটি পরিপত্র (বিজ্ঞপ্তি) জারি করতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ধরনের শাস্তির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতেও বলে আদালত। শাস্তি দেওয়ার ঘটনায় কোনো ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধির (চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর) সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর অধীনে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শককে আরেকটি পরিপত্র জারি করতে বলে আদালত, যাতে সালিশের নামে বিচার-বহির্ভূত শাস্তির ঘটনায় প্রতিটি থানাকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিতে বলা হয়।
এছাড়াও পরিপত্রে কারো লিখিত অভিযোগের জন্য অপেক্ষা না করে এ ধরণের আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জানামাত্র মামলা দায়েরে প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দিতে বলা হয়।
দৈনিক প্রথম আলোতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ‘জরিমানার টাকায় ভূরিভোজ! গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীর বন্ধুকে ১০১ দোররা’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে আদালত স্বতপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিসহ ৫ জনকে তলব করে।
পরে গত ১ মার্চ আদালত আসামিদের জামিন বাতিলে আবেদন করতে ওসিকে নির্দেশ দেয় এবং জামিনের নথি তলব করে।
রোববারের শুনানিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা হাজির হয়ে জানান, তাদের করা আবেদনে আসামিদের জামিন বাতিল হয়ে গেছে। তারা বর্তমানে পলাতক।
শুনানি শেষে আদালত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজির থেকে অব্যাহতি দিলেও আগামী ২০ মার্চের মধ্যে মামলার একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়।
আদালতে রাণীনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শকের (তদন্ত) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে আইনজীবী আবু ওবায়দুর রহমান ও অবন্তী নূরুল। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান মামলা পরিচালনা করেন।
২০০১ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতি গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার হাই কোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে সব ধরনের ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর মুফতি মো. তৈয়ব ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১২ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ এক রায়ে বলে, ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে, তবে যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তি তা দিতে পারবে। আর ফতোয়া গ্রহণের বিষয়টি হতে হবে স্বতস্ফূর্ত। এর মাধ্যমে কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না। এমন কোনো ফতোয়া দেওয়া যাবে না, যা কারো অধিকার ক্ষুণœ করে।
২০১০ সালের ৮ জুলাই বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ এক রায়ে ফতোয়ার নামে স্থানীয় সালিশে বিচারবর্হিভূত শাস্তি অবৈধ ঘোষণা করে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএন/এসইউ/পিডি/২৩০৫ ঘ.