শহীদ মিনারের পাশের মাজার ভাঙার নির্দেশ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে সাধারণ একটি কবর ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাজারের স্থাপনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, তবে কবরটি ঠিক রাখতে বলা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2012, 01:42 AM
Updated : 22 Feb 2012, 01:42 AM
ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে সাধারণ একটি কবর ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাজারের স্থাপনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, তবে কবরটি ঠিক রাখতে বলা হয়েছে।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের এক রিট আবেদনে বুধবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে বলা হয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের অবৈধ স্থাপনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে। এই আদেশ বাস্তবায়ন করে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জমি রক্ষায় কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে আদালত।
সংস্কৃতি সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের প্রশাসক, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান স্থপতি, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিকে ১২ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে।
এছাড়া শহীদ মিনারের জমির পরিমাণ ও অবস্থা জানিয়ে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান স্থপতি, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসককে আরেকটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।
অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহীদ মিনারের ২০ কাঠা জায়গা দখল করে তেলশাহ’র মাজার নামে একটি মাজার গড়ে উঠেছে। আদালত আদেশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের সব স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।”
মনজিল মোরসেদ বলেন, “শহীদ মিনার ভাষা শহীদদের একটি স্মৃতি। তাদের আন্দোলনের সূত্র ধরেই আমরা মাতৃভাষাকে পেয়েছি। বিশ্বে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হচ্ছে।”
“তার পাশেই কিছু লোক নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য মাজার তৈরি করেছে, যদিও সেখানে কোনো সুফি সাধকের কবর ছিল না। এখন তারা সেখানে সুউচ্চ মিনার তৈরির পরিকল্পনা করছে”, যোগ করেন এই আইনজীবী।
শহীদ মিনারের পেছনে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার কথা উল্লেখ করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠে ‘বেড়ে উঠছে কথিত মাজার, হুমকিতে শহীদ মিনার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে মুনতাসির মামুন বুধবার সকালে একটি রিট আবেদন করেন।
ঢাকা মেডিকেলের সাবেক শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, “এখানে কখনো কোনো মাজার ছিল না। ছিল সাধারণ একটা কবর। তারা এ-ও জানান, কবরটি মেডিকেল কলেজের কোনো এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর। পরে সেই কবরটি নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০০ সালের দিকে ধীরে ধীরে মাজার বানিয়ে নিয়েছে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী।”
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য আশপাশের যে চার একর জমি বরাদ্দ আছে, সেখান থেকেই দখল দেওয়া হয়েছে ওই ২০ কাঠা। ইতিমধ্যে দখলকৃত জায়গায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। মাজার ব্যবসায়ীরা এখন কথিত পীরের কবরের ওপর গম্বুজ ও কবরের পাশে কমপ্লেক্স নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি স্মারক ও বাঙালি চেতনার প্রতীক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএন/আরএ/জেকে/১৩৩৫ ঘ.