কুমিল্লার মেয়র হলেন মনিরুল হক সাক্কু

পৌরসভার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুই হলেন কুমিল্লার প্রথম নগরপিতা।

মঈনুল হক চৌধুরীও শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2012, 06:29 AM
Updated : 30 March 2017, 02:50 PM

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হাঁস প্রতীকে ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাক্কু।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন- ইভিএমে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে প্রথম নির্বাচনে হার হয়েছে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজল খান পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট। আনারস প্রতীকে তিনি সাক্কু থেকে ২৯ হাজার ১০৬ ভোট কম পেয়েছেন। তার পক্ষ থেকে ফলাফল মেনে নেওয়া হয়েছে।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে বেসরকারি পূর্ণ ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।

চট্টগ্রামে একটি এবং নারায়ণগঞ্জে নয়টি ওয়ার্ডে সাফল্যের পর কুমিল্লায়ই ২৭ ওয়ার্ডের ৬৫ কেন্দ্রের সবকটিতে নির্বাচন হয় ইভিএমে। দেশে এই প্রথম নির্বাচনে ব্যালট পেপার নামে কোনো বিষয় ছিল না।

শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হওয়া এই নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার কথাও শোনা যায়নি ভোটারদের মধ্যে। সব প্রার্থীই বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, কুমিল্লার নির্বাচন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ৮৬ হাজার ৭৪ জন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭২ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটের হার ৭৫ দশমিক ০৬ শতাংশ।

রাত ৯টায় টাউন হলে নির্বাচনী কেন্দ্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণার পর সাক্কু সাংবাদিকদের বলেন, যারা পরাজিত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিয়েই তিনি কুমিল্লার উন্নয়নে কাজ করবেন।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থীর পরামর্শ নিয়েই সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

এর আগে সন্ধ্যায় ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা শুরুর আগেই সাক্কু দাবি করেন, তিনি বিজয়ী হতে চলেছেন।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টার মাথায় কান্দিরপাড়ে নির্বাচনী নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ঢোকার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ৫০ শতাংশ ভোট পাবো।”

নাগরিক কমিটির প্রার্থী সাক্কু বলেন, “জনগণ আমাকে ঋণী করে ফেলেছে। মৃত্যু পর্যন্ত এই ঋণ আমি শোধ করে যাবো।”

ইভিএমে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপির নেতা সাক্কু দল থেকে অব্যাহতি নিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নেন। দলে পুনরায় ফিরছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জনতার রায়ের কথা ম্যাডামকে (খালেদা) জানাবো। আশা করি, তিনি আমাকে দলে ফিরিয়ে নেবেন।”

অশীতিপর আফজল খান অসুস্থ থাকায় তার কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে টাউন হলে নির্বাচনী কেন্দ্রে থাকা তার ছেলে ও নির্বাচনী এজেন্ট মাসুদ খান ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই ফলাফল মেনে নেওয়া হয়েছে।

যাওয়ার সময় সাক্কুকে অভিনন্দিত করে মাসুদ বলেন, “চাচা, যাই; ভালো থাকবেন।”

কুমিল্লায় মেয়র পদে নয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূর উর রহমান তানিম (চশমা) পেয়েছেন ৮ হাজার ৫১৪ ভোট, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহমেদ সেলিম (টেলিভিশন) পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৬১ ভোট, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু (জাহাজ) পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৪ ভোট।

এছাড়া জেএসডির শিরিন আক্তার (তালা) ১ হাজার ১০৩ ভোট, চঞ্চল কুমার ঘোষ (ঘোড়া) ৮৯০ ভোট, মো. সালমান সাঈদ (দোয়াত-কলম) ৪২৭ ভোট এবং মামুনুর রশিদ (কাপ-পিরিচ) ৫৮৫ ভোট পেয়েছেন। মামুন শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন, তবে ভোটিং মেশিনে তার নাম ছিল।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সুযোগ না থাকলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার সদস্য মোতায়েন ছিল কুমিল্লায়, এর মধ্যে এক হাজার র‌্যাব সদস্য।

এই প্রথম কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরেও কেন্দ্র প্রতি ৫ জন করে অ্যাকশন ফোর্স রাখা হয়। ভোটগ্রহণের পুরোপ্রক্রিয়া ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ধারণ করা হয়। এছাড়া ওয়ার্ড প্রতি ছিলেন একজন করে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক।