মোমিন হত্যা: মৃত্যুদণ্ড ওসি রফিকসহ ৩ জনের

কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম মোমিন হত্যার দায়ে ওসি রফিকুল ইসলামসহ তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বাকি ছয় আসামিকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2011, 00:47 AM
Updated : 22 Dec 2015, 07:50 PM

বুধবার ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক মো. রেজাউল ইসলাম এ দণ্ডাদেশ দেন।

এ সময় নিহতের চার ভাই, তিন বোন ও মামা এবং ওসি রফিকের স্ত্রী, ভাই ও ছেলে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় শুনে রফিকের স্ত্রী শায়লা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি ও তার আইনজীবী নূরুল আলম খোকন সাংবাদিকদের জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ার নিহতের ভাই শামসুল ইসলাম বলেন, "এ রায়ের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। অপরাধীরা যতো শক্তিশালী, ক্ষমতাধর হোক না কেন আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন- এ রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণ হয়েছে।"

বাদী পক্ষের ব্যক্তিগত আইনজীবী হাবিবুর রহমান শওকত বলেন, "দণ্ডিত ওসি রফিককে বাঁচানোর জন্য পুলিশের অনেক কর্তাব্যক্তি অন্যায়ভাবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রচার এবং নিহতের পরিবারের ঐকান্তিক চেষ্টায় সে তারা সফল হতে পারেননি।"

ওসি রফিক ছাড়া অন্য যে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- বরগুনার ছোট পাথর ঘাটার মো. আ. মোতালেবের ছেলে সাখাওয়াৎ হোসেন জুয়েল ও বরিশালের খালিসা উত্তর পাড়ার মোতাহার আলীর ছেলে জিয়া ওরফে তারেক। তারা দু'জনই পলাতক।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- কাফরুলের মফিজুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান তাজ, বরিশালের কয়েদি গ্রামের মোক্তার আলীর ছেলে মনির হাওলাদার, লক্ষ্মীপুরের নন্দনপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে বাবু (বর্তমান ঠিকানা- উত্তর ইব্রাহীমপুর, কাফরুল), কাফরুলের হায়াত আলীর ছেলে মো. জাফর, একই এলাকার মহিউদ্দিনের ছেলে মো. শরীফ উদ্দিন এবং হাসিবুল ইসলাম জনি।

এদের মধ্যে মনির, জনি, জাফর ও শরীফ পলাতক।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাদের আরো ছয় মাস করে কারাভোগ করতে হবে।

বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাসদ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর নেতা, কমার্স কলেজের ছাত্র মোমিনকে তাদের উত্তর ইব্রাহীমপুরের বাসার সামনে খুন করে দুষ্কৃতকারীরা।

ওই খুনের ঘটনায় প্রথম তদন্তে কাফরুল থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পুলিশ এড়িয়ে গেলেও পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে তার সম্পৃক্ততার পাওয়া যায়।

ঘটনার দিনই মোমিনের বাবা আব্দুর রাজ্জাক ওসি রফিকসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওসি রফিককে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বাদি নারাজি আবেদন করেন।

এরপর গোয়েন্দা পুলিশের পুনঃতদন্তেও নারাজি আবেদন দেন বাদি। পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে ওসি রফিকসহ নয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলে।

গত ২ জানুয়ারি ওসি রফিক ও শীর্ষসন্ত্রাসী তাজের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠনের পর গত ১২ মে থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত মামলার শুনানি চলে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ছয় বছর পর বুধবার রায় হলো।