ঢাকা, জুলাই ১৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের 'সৌভাগ্য রজনী' পবিত্র শবে বরাত।
রোববার দিনের আলো নেভার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মহিমান্বিত এই রাত।
ইসলামী বর্ষপঞ্জির চারটি মর্যাদাপূর্ণ রাতের একটি হলো লাইলাতুল বরাত, যা ভারতীয় উপমহাদেশে 'শবে বরাত' নামে পরিচিত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। এই রাতের ইবাদতে পাপমুক্তি হয় বলেই মুসলমানদের বিশ্বাস।
শবে বরাতের সন্ধ্যা থেকেই মসজিদগুলোতে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় ইবাদত-বন্দেগিতে শামিল হন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রাতভর নফল নামাজ চলে বাড়িতেও। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অতীতের ভুলত্র"টির জন্যে ক্ষমা চেয়ে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের সামর্থ্য কামনা করে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন।
নফল নামাজ আদায়, মিলাদ মাহফিল, জিকির, আসকার, ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল এবং কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পবিত্র এ রাতটি অতিবাহিত করেন তারা।
এ দেশের সামাজিক প্রথা অনুযায়ী শবে বরাতের সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে রুটি, হালুয়া, মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন খাবার পাঠানো হয়। খাবার বিতরণ করা হয় দরিদ্রদের মধ্যেও।
শবে বরাত উপলক্ষে রোববার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মিলাদ মাহফিল, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, আরামবাগ বাবে রহমত ও গুলশানে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দুপুর থেকেই শুরু হয় উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে হালুয়া, রুটিসহ বিভিন্ন ঐহিত্যবাহী খাবার বিক্রি হয় সারাদিনই। পাশাপাশি বিভিন্ন কবরস্থানে গিয়ে পরিবারের মৃত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে নগরবাসী।
পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যার পর আজিমপুর কবরস্থানে যান বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "দশ বছর আগে বাবা মারা গেছেন। মা মারা গেছেন পাঁচ বছর হলো। ঈদে-আনন্দে বা আজকের মতো বিশেষ দিনে তাদের খুব মনে পড়ে। তাই কবর জিয়ারত করতে এসেছি।"
আমিরুলের বাবা ছিলেন বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানির ভক্ত। তাই সারা রাত মহাখালীর মসজিদে গাউসুল আজমে নামাজ পড়ে, কোরান তিলাওয়াত করে কাটাবেন বলে জানালেন তিনি।
আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবর জিয়ারত করতে আসা ধানমণ্ডির বাসিন্দা হুমায়রা সিদ্দিকা বলেন, "বাবার কবর জিয়ারত করতে এসেছি। রাতে আল্লাহর দরবারে নিজের ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য মুনাজাত করবো।"
আজিমপুর কবরস্থান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই দল বেঁধে স্বজনদের জন্য দোয়া করছেন কবরের পাশে বসে। কেউ মৌলভী ডেকে, আবার কেউ নিজেরাই মুনাজাত করছেন। অনেকেই সঙ্গে এনেছেন সন্তানদের।
কবরস্থানের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দেখা যায়, শত শত ভিক্ষুক বসে আছে। এই রাতে দান খয়রাতে বাড়তি সওয়াব হয় বলেই মুসলমানদের বিশ্বাস।
অবশ্য এই শবে বরাতের রাতেও কবরস্থানের নিরাপত্তাকর্মীরা চাঁদা আদায় করেন বলে অভিযোগ করলেন এক ভিক্ষুক।
শুক্কুর আলী নামের ওই অন্ধ ভিক্ষুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কয়েকজন লোক আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা চাইছিল। দিছি না দেইখ্যা আমারে বাইর কইরা দিছে।"
দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী কালাম বললেন, কবরস্থানের ভেতরে ভিক্ষা করা নিষেধ। তাই তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএন/ডিডি/জেকে/০১১৯ ঘ.