ভোটের খরচের বড় অংশই যায় নিরাপত্তায়

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে পরিচালনার চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা খাতেই বেশি অর্থ ব্যয় হয়। সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলায় ব্যয় হওয়া ৯৮ কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রমেই।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2011, 10:51 PM
Updated : 8 July 2011, 10:51 PM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা, জুলাই ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে পরিচালনার চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা খাতেই বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলায় ব্যয় হওয়া ৯৮ কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রমেই।
কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের সময় নির্বাচনী কর্মকর্তার তিন গুণ পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব সদস্য নিয়োগ করতে হয় বলেই মোট ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় তাদের পেছনেই।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ সচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ৮১ লাখ টাকার বেশি। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদে নির্বাচন পরিচালন ব্যয় দাঁড়ায় ৭ কোটি টাকার বেশি। আর সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তা আরো বেড়ে হয় ৬৭ কোটি টাকার বেশি।
এই হিসাবে প্রথম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় নবম নির্বাচনে ব্যয় বেড়েছে ৭৭ গুণ।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলাখাতে ১৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও নবম সংসদ নির্বাচনে এসে তা প্রায় প্রায় ৫ গুণ বেড়ে ৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
বর্তমান সরকারের মেয়াদে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে ১২০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা খাতে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে ইসি বরাদ্দ পেয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় হবে বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি যাবে।
গত ৫ সংসদ নির্বাচনের তুলনামূলক চিত্র
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম সংসদে নির্বাচন পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলাখাতে ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৭ টাকা। এর মধ্যে ভোটের আয়োজনে গেছে ৭ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ১০৭ টাকা। আর আইন শৃঙ্খরায় ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকা।
১৯৯৬ সালের ফেব্র"য়ারিতে ৬ষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে মোট ৩৭ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩০ টাকা ব্যয় হয়। ওই সময় পরিচালনায় ব্যয় হয়েছিল ৭ কোটি ৬২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০১ টাকা। আর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে খরচ হয়েছে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৯ টাকা।
একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে পরিচালনা বাবদে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ৩৪৭ টাকা এবং আইন শৃঙ্খলা খাতে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ১ হাজার টাকা ব্যয়ের পর মোট খরচ দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছিল জাতিসংঘের অনুদান হিসেবে।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ ৩২ হাজার ২২০ টাকা। এর মধ্যে পরিচালনায় ৩০ কোটি ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫৮ টাকা এবং আইন শৃঙ্খলা খাতে ৪২ কোটি ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা গেছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন ভোটারের বিপরীতে নির্বাচনী ব্যয় ছিল ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্র"য়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হয় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে তা বেড়ে ৫ কোটি ১৬ লাখ এবং ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
এক কোটি টাকা গোয়েন্দা কার্যক্রমে
নবম সংসদ নির্বাচনে ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা ব্যয়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে উপনির্বাচনের খরচও রয়েছে।
এই নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা খাতে সশস্ত্রবাহিনীর দৈনিকভাতা, কন্টিনজেন্সি, জ্বালানি ও অতিরিক্ত সময়ের জন্য মোতায়েনসহ ব্যয় হয় ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৮৪ টাকা। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন-শৃঙ্খলা খাতে ৮৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৩ টাকা ব্যয় হয়।
এছাড়া গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনায় এক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ইসির বাজেট শাখার নথিতে উল্লেখ করা রয়েছে।
আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ভোট কর্মকর্তার তিনগুণ
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ভোটের সময় যে কয়জন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে হয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করতে হয় তার তিনগুণ। এ কারণেই নির্বাচনের মোট ব্যয়ের একটি বড় অংশ আইন শৃঙ্খলাখাতে চলে যায়।
নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচন আয়োজনের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। আর আইন-শৃঙ্খলা খাতেই তো বেশি খরচ হবে। সেনা, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ছাড়া কেউ নির্বাচন করতে চায় না। এ জন্য তাদের ডাকতে হয় আমাদের। বিপুল বরাদ্দ তাদের পিছনে দিতে হয়।"
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শাসুল হুদা জানান, পাঁচ বছর মেয়াদে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচনী সরঞ্জামের পেছনে বড় অংকের অর্থ ব্যয় হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করলে পাঁচ বছরে প্রায় এক হাজার ৮৭ কোটি টাকার সাশ্রয় হবে।
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে আগামী দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ওই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/জেকে/এমআই/১০৪৫ ঘ.