ইউনুসের আত্মহত্যা: ক্ষুদ্র ঋণকে দুষলেন স্ত্রী

বরিশাল শহরে এক রিকশাচালকের আত্মহত্যার জন্য তার স্ত্রী ক্ষুদ্র ঋণকে দায়ী করেছেন।

বরিশাল প্রতিনিধিসাইদ মেমন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2011, 10:26 AM
Updated : 27 June 2015, 01:04 AM

গত শনিবার সকালে জনৈক সেরেস্তা আলীর ছেলে ইউনুস সরদার (২৫) শহরের ৪নং ওয়ার্ডের রোকেয়া আজিম সড়কের ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তার স্ত্রী লাইজু বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন তার স্বামী। নিজে জামিনদার হয়ে স্ত্রীর নামে ঋণ নিয়েছিলেন ইউনুস।

রিকশা চালাতে কষ্ট হতো বলে অটোরিকশা কেনার ইচ্ছা ছিল ইউনুসের। তাই বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তির কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা ঋণ করেন স্বামী-স্ত্রী।

লাইজু জানান, গ্রামীণ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আশা, চেতনা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, হিলফুল ফযুল সমাজকল্যাণ সংস্থা ও ওসেড থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন তারা।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও চড়া সুদে প্রায় ২০ হাজার টাকা ধার ছিল তার।

লাইজু বলেন, ওইসব ঋণের জন্য প্রতি সপ্তাহে দুই হাজার ১০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হতো। প্রায়ই টাকা দিতে পারতো না। তাই এনজিও মাঠকর্মীরা প্রায়ই ইউনুসকে গালমন্দ করতো।

কাউনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। রোববার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে ইউনুসের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ক্ষুদ্র ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, এক ব্যক্তিকে কোনো সংস্থা ঋণ দিলে অন্য সংস্থা তাকে ঋণ দিতে পারবে না।

লাইজু জানান, ইউনুস এ বছরের বিভিন্ন সময় হাঁস-মুরগী পালনের কথা বলে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৮ হাজার, ইসলামী ব্যাংক থেকে ১০ হাজার, আশা থেকে ৮ হাজার, চেতনা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা থেকে ১১ হাজার, সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা থেকে ১৩ হাজার, হিলফুল ফযুল সমাজ কল্যাণ সংস্থা থেকে ১০ হাজার, ওসেড থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন।

এছাড়াও একজনের কাছ থেকে মাসিক নয়শো টাকা সুদে ৬ হাজার টাকা, আরেকজনের কাছ থেকে মাসিক ২শ টাকা সুদে ২ হাজার টাকা এবং ৩শ টাকা সুদে আরো দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫শ টাকা করে ইউনুস ঋণ করেন বলে জানান লাইজু। এমনকি আত্মীয়স্বজনদের কাছেও ১০ হাজার টাকা দেনা রয়েছে।

ইউনুস-লাইজুকে ঋণদাতা সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার জাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ঋণ গ্রহীতারা অনেক সময় তথ্য গোপন করেন। তবে সংস্থার মাঠকর্মীদেরও গাফিলতি থাকতে পারে। এই ধরনের ঘটনা বন্ধে ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রয়োজন আছে।

আশার জেলা ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “ইউনুস নিয়মিত কিস্তি দিয়ে আমাদের টাকা শোধ করেছে। তার কাছে এখনও ১৪০০ টাকা পাওনা আছে- তা আমরা মওকুফ করে দেব।”

ইউনুসের মৃত্যুর পর আশার একজন মাঠকর্মী ঋণ গ্রহীতার পাশ বই নিয়ে যায় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান লাইজু।

পাশ বই ফেরত আনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে নজরুল বলেন, “আমাদের কাছে সঞ্চয় ও নিরাপত্তা খাতে তার ৮০০/৯০০ টাকা জমা আছে যা আমরা ওয়ারিশদের ফেরত দেব।”

তিনি আরো বলেন, “ঋণ একজনের নামে থাকলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকেন এবং তাদের কেউ মারা গেলে আমরা তা মওকুফ করে দেই। ”

স্ত্রীর নামে ঋণ নিলেও স্বামী মারা গেলে তাদের সংস্থার নীতি সম্পূর্ণ ঋণ মওকুফ করে দেয়া, জানান নজরুল।

লাইজু বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।

শনিবার সকালে কাজে গিয়ে বেলা ১২টার দিকে বাসায় ফিরে ইউনুসকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঘরের মধ্যে ঝুলতে দেখেন তিনি। তার চিৎকারে এলাকার লোকজন জড়ো হলে পুলিশে খবর দেয়া হয়।