দিগন্তের অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

সন্দেহভাজন একজন যুদ্ধাপরাধীর মালিকানাধীন একটি টেলিভিশন স্টেশনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও এক রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে বলে প্রশ্ন উঠেছে।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2010, 08:08 AM
Updated : 28 August 2010, 08:08 AM

শুক্রবার রাতে দিগন্ত টেলিভিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে চ্যানেলটির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান কেক কেটে উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। কেক কাটার পর তা অন্যদের খাইয়েও দেন তিনি।

২০১০ সালে দিগন্ত টেলিভিশনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ এবং কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা (ছাত্রশিবিরের পূর্বসূরি সংগঠন) মীর কাসেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এ সদস্য দিগন্ত টিভির ব্যবস্থাপনা কমিটিরও চেয়ারম্যান।        

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিচারক প্যানেল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেল গঠন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যুদ্ধাপরাধে সংশি­ষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘চিহ্নিত’ যুদ্ধাপরাধীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে এর আগে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। এ তালিকায় মীর কাসেমের নামও রয়েছে। 

দিগন্ত টিভিতে মহাজোট সরকারের মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সহায়ক মঞ্চের আহ্বায়ক শাহরিয়ার কবীর।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরীদের কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা ঠিক না। এর দায়-দায়িত্ব দিলীপ বড়ুয়াকেই নিতে হবে।”

শাহরিয়ার কবীর বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমরা যখন আন্দোলন করছিলাম তখন দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দলও এর সঙ্গে ছিলো। তাহলে দিগন্ত টিভির অনুষ্ঠানে উনি কীভাবে যান, সে প্রশ্ন আমারও।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এজন্য নিন্দা জানাতে পারি। এরকম মন্ত্রীকে আমাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানাতে পারি এবং প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করতে পারি, তার মন্ত্রীরা যেনো সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের অনুষ্ঠানে না যান।”

শনিবার সকালে বিদেশ চলে যাওয়ায় দিলীপ বড়ুয়ার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শুনলাম দিলীপ বড়ুয়া যাচ্ছেন, এজন্য আমিও সেখানে গিয়েছি।”

তিনি অবাক হয়ে উল্টো এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, “কিছুদিন আগে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া মীর কাসেম আর দিগন্তের মীর কাসেম কী একই ব্যক্তি?” 

এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, “প্রফেশনাল হিসেবে গিয়েছি আমি। আমারও মিডিয়া রয়েছে। আরেকটি মিডিয়ার অনুষ্ঠানে যেতেই পারি। কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় আমি যাইনি।”

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “যেভাবে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী যেতে পেরেছে, সেভাবে আমিও গেছি।”

তিনি আরো বলেন, “কোনো চ্যানেলকেই কোনো দলের মুখপাত্র মনে করি না আমি।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে মালিকগোষ্ঠীর প্রতি নীরব সমর্থন দেওয়া। মীর কাসেমের বিরুদ্ধে নানান ধরনের অভিযোগ থাকায়, তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে একজন মন্ত্রীর যাওয়াটা অশোভনীয় দেখায়।”

“এ জন্য দিলীপ বড়ুয়াকে অবশ্যই জনগণের কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হবে,” বলেন তিনি।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫০ লাখ টাকার অনুদান দেয় ইসলামী ব্যাংক। কিন্তু সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকায় ইসলামী ব্যাংকের অনুদান নিতে রাজি হয়নি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

দিগন্ত টিভির চেয়ারম্যান মীর কাসেম ইসলামী ব্যংকের সাবেক চেয়ারম্যান।