নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কড়াকড়ি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশের নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ নীতিমালা সংশোধন করেছে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে কোনো অবস্থাতেই কোনো পর্যবেক্ষক ভোট প্রদানের স্থানে (মার্কিং প্লেস) প্রবেশ করতে পারবে না। বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মঈনুল হক চৌধুরী

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2010, 11:50 PM
Updated : 10 August 2010, 11:50 PM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা, অগাস্ট ১১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার নিবন্ধনের সময়সীমা এক বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। ভোটকক্ষে সব সময় থাকতে পারবে না কোনো পর্যবেক্ষক।
নীতিমালায় এমন সংশোধনী এনে নতুন করে 'নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা' প্রণয়ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া, পর্যবেক্ষণ সংস্থার দায়িত্ব ও পর্যবেক্ষক মোতায়েন বিষয়ে কিছু সংশোধনী এনে গত ৩ আগস্ট এ নীতিমালা জারি করা হয়।
নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্থানীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর গুণগত মান বাড়াতেই নীতিমালায় বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, উপ নির্বাচনসহ বেশ কিছু নির্বাচনে পর্যবেক্ষন সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করেই নতুন বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
"শুধু নির্বাচনী এলাকায় গেলো আর ফিরে এসে প্রতিবেদন জমা দিলো-তা তো হতে পারে না। এক্ষেত্রে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, কী কী বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবে এবং কোন্ পদ্ধতিতে প্রতিবেদন জমা দেবে তাও নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে," বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
নীতিমালা অনুযায়ী গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যেসব বেসরকারি সংস্থা কাজ করে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণকে তথ্য দিয়ে সচেতন করে তারাই পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। একাধিক সংস্থার একটি গ্র"প কিংবা অংশীদারিত্ব গঠন করলে তা একক সংস্থা হিসেবে পরিচিত হবে।
ছহুল হোসাইন জানান, প্রত্যেক পর্যবেক্ষণ সংস্থা প্রতি দলে পাঁচ জন করে একাধিক ভ্রাম্যমান পর্যবেক্ষক দল নিয়োগ করতে পারবে। পর্যবেক্ষকরা স্বল্প সময় কেন্দ্রে অবস্থান ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
তবে ভোটকেন্দ্রে বুথভিত্তিক কোনো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষক দেওয়া যাবে না। কোনো অবস্থাতেই কোনো পর্যবেক্ষক ভোট প্রদানের স্থানে (মার্কিং প্লেস) প্রবেশ করতে পারবে না।
এই নিয়ম দেশি ও বিদেশি সব ধরনের পর্যবেক্ষণ সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।
ছহুল হোসাইন বলেন, "পর্যবেক্ষকরা নীতিমালা অনুসরণ করছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে। অনুসরণ না করলে পর্যবেক্ষককে প্রত্যাহার করতে হবে। নীতিমালা লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে।"
পর্যবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যবেক্ষকের যোগ্যতা বরাবরের মতোই কমপক্ষে ২৫ বছর এবং এসএসসি পাশ বা সমমানের রাখা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবে না কোনো পর্যবেক্ষকের।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সংস্থার নিবন্ধন মেয়াদ অনুমোদনের তারিখ হতে ৫ বছরের জন্য বহাল থাকবে। যদি না কোনো কারণে এর আগেই তা বাতিল করা হয়।
পর্যবেক্ষক মোতায়েনের একক ইউনিট হবে উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানা অথবা সংসদীয় এলাকা। একাধিক সংস্থাকে একক ইউনিটে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
প্রত্যেক পর্যবেক্ষণ সংস্থা নির্ধারিত ইউনিটের ভোটকেন্দ্রের ভোট গণণার সময় কক্ষে এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে ফলাফল একত্রীকরণের সময় একজন করে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে। তবে তার নাম ভোটের দিন সকালেই প্রিসাইডিং ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।
পর্যবেক্ষক ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কক্ষ থেকে বের হতে পারবেন না। গণনাকালে কক্ষ থেকে বের হলে আর ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার নয়, এমন লোককে পর্যবেক্ষক হিসাবে মোতায়েন করা যাবে না।
ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক ও পর্যবেক্ষণ সংস্থা বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে কয়েকশ' পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। ইসি তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে ১৩৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয়।
গত বছর সংস্থাগুলোর নিবন্ধন মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এরপর এ পর্যন্ত দেশের প্রায় ৬শ' পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। এরমধ্যে তিনশ' ১৫টি পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে মনোনীত করে ইসি। মনোনীত সংস্থাগুলোর আবেদন কমিশন সভায় পাঠানো হবে। নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।"
১২ আগস্টের মধ্যে সিসিসি'র প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনের প্রতিবেদন জমা দেয়নি ছয় সংস্থা।
পর্যবেক্ষণ সংস্থা বিষয়ক ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক জানান, নয়টি স্থানীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিসিসি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। এরমধ্যে ব্রতী, জানিপপ ও অধিকার প্রতিবদন জমা দিয়েছে। ওয়েব ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসিওয়াচ, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, খান ফাউন্ডেশন এবং আইইডি তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেয় নি।
১২ আগস্টের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে এই ছয় সংস্থাকে। তাতে ব্যর্থ হল কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/কেএমএস/১১৩০ ঘ.