সাংসদ বদির ওপর নাখোশ ট্রাকমালিকরা

টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে পাঁচশরও বেশি ট্রাক প্রত্যাহার করবেন মালিকরা। সরকারদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে 'সিন্ডিকেট' করার অভিযোগে তাদের এ সিদ্ধান্ত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2010, 06:37 AM
Updated : 29 May 2010, 06:37 AM
কক্সবাজার, মে ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সরকারদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে 'সিন্ডিকেট' করার অভিযোগ এনে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের ট্রাক প্রত্যাহার শুরু করেছেন মালিকরা।
স্থানীয় ট্রাকমালিকরা দাবি করেছেন, সরকারদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির 'সিন্ডিকেট বাণিজ্য', ট্রাকশ্রমিকদের ওপর নির্যাতন ও চাঁদা আদায়ের কারণে তারা বন্দর থেকে পণ্য বহনকারি পাঁচশরওর বেশি ট্রাক প্রত্যাহার করছেন।
শনিবার স্থলবন্দর এলাকা থেকে ৭৬টি ট্রাক প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান উখিয়া ট্রাকমালিক সমিতির আহ্বায়ক রফিক উদ্দিন মাহমুদ।
তিনি জানান, বেলা ৩টার দিকে ট্রাকগুলো কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বালুখালি এলাকায় নিয়ে আসা হয়।
কক্সবাজার জেলা ট্রাকমালিক গ্র"পের সাধারণ সম্পাদক এস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ট্রাকমালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিবহন ব্যবস্থার সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করা হতো।
তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাংসদ আবদুর রহমান বদির নেতৃত্বে 'সিন্ডিকেট' করে টেকনাফের গাড়িগুলোকেই পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের হোটেল সিলভার সাইনে ট্রাকমালিক ও শ্রমিকদের এক বৈঠকে ট্রাক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান রফিক।
তিনি বলেন, "শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে দুইশরও বেশি ট্রাকমালিক ও শ্রমিকের উপস্থিতিতে ট্রাক প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।"
রফিক জানান, চট্টগ্রাম, আমিরাবাদ, চকরিয়া, খুটাখালি, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, কোটবাজার ও উখিয়া এলাকার পাঁচশরও বেশি ট্রাক টেকনাফ স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহন করে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর টেকনাফ এলাকার মাত্র ১৭টি ট্রাক ছাড়া অন্য এলাকার ট্রাকগুলো নিয়মানুযায়ী 'সিরিয়াল' পাচ্ছে না।
"টেকনাফের সরকারদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট টেকনাফ স্থলবন্দরে পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে," অভিযোগ করে রফিক দাবি করেন, "সাংসদ বদির ছোট ভাই আবদুল আমিন, সাংসদ বদির ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ইসলাম, বাহাদুর, বিছমিল্লাহ রাইচ মিলের মালিক হাফেজ আহমদ, দিদার ও জাপান এই 'সিন্ডিকেট' নিয়ন্ত্রণ করছেন।"
কক্সবাজার জেলা ট্রাকমালিক গ্র"পের সাধারণ সম্পাদক এস্তাফিজুর অভিযোগ করেন, এই 'সিন্ডিকেটটি' টেকনাফ এলাকার ১৭টি ট্রাককে নিয়ম লঙ্ঘন করে বারবার পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয়। কিন্তু উখিয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার ট্রাকগুলোকে পণ্য পরিবহনের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য ১৫-২০ দিন অপেক্ষা করতে হয়।
তার তিনটি ট্রাক ১৫ দিন ধরে টেকনাফ বন্দরে অবস্থান করেও পণ্য পরিবহণের সুযোগ পায়নি বলে জানান এস্তাফিজুর।
একটি ট্রাকে পণ্য পরিবহন ভাড়া ১২ হাজার টাকা নির্ধারিত হলেও মালিক মাত্র নয় হাজার টাকা পান বলে জানান উখিয়া ট্রাক মালিক সমিতির আহ্বায়ক রফিক উদ্দিন মাহমুদ। তিনি দাবি করেন, অবশিষ্ট টাকা এমপির চাঁদা হিসেবে কেটে রাখা হয়।
এই সিন্ডিকেট ট্রাকশ্রমিকদের শারিরিকভাবেও নির্যাতন করে বলে দাবি করেন তিনি।
ট্রাকমালিক শ্রমিকদের অভিযোগ বিষয়ে সাংসদ আবদুর রহমান বদির ছোট ভাই আবদুল আমিন মোবাইল ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। আমরা কোনো সিন্ডিকেট করিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে হলে সামনাসামনি কথা বলতে হবে।"
টেকনাফ বন্দর থেকে ট্রাক প্রত্যাহারের কথা জানেন না বলেও দাবি করেন আমিন।
ট্রাকমালিক শ্রমিকদের অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে সাংসদ বদির পাঁচটি মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। সেগুলোর মধ্যে একটি নাম্বার খোলা পাওয়া যায়। তবে ওই নাম্বারে একাধিকবার ফোন করার পরও বদি তা রিসিভ করেননি।
কক্সবাজারে শুক্রবারের বৈঠকে দুই শতাধিক ট্রাক মালিক ও অর্ধশতাধিক শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে জানান এস্তাফিজুর। এতে ট্রাকমালিকদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রামের আবু তাহের, জয়নাল আবেদীন, শামসুল আলম, জুনু কোম্পানী, কক্সবাজার ও অন্যান্য এলাকার মকবুল কোম্পানী, সব্বির আহমদ, গিয়াস উদ্দিন, সুলতান মাহমুদ, মোহাম্মদ সেলিম, সেলিম কায়সার, রফিক কোম্পানী, তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, তোফায়েল কোম্পানী, আজিজুল হক, বেলাল, ফয়েজ আহমদ, মোজাহের আহমদ, আবুল কালাম, মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ।
সভায় ট্রাকমালিক শ্রমিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন কক্সবাজার ট্রাকমালিক গ্র"পের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, উখিয়া শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান, কক্সবাজার জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহির উল্লাহ, আন্তঃজেলা শ্রমিক নেতা মোস্তাক আহমদ, কক্সবাজার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও চকরিয়া পৌর কাউন্সিলর ফজলুল করিম সাঈদী ও সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/পিডি/১৮৩০ ঘ.