'গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আর ঋণ নিইনি'

৩৫ বছর আগে সুফিয়া নামে একজনকে ঋণ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু। ঋণে তাদের অবস্থার কোনো বদল হয়নি বলছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2010, 07:58 AM
Updated : 26 June 2015, 09:28 PM

শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ক্ষুদ্র ঋণগ্রাহক সুফিয়া খাতুন মারা যান ১৯৯৭ সালে।

তার দুই মেয়ের বড়জন হালিমা বেগম মানসিকভাবে অসুস্থ। হালিমার দুই ছেলে মোহাম্মদ বাবুল (২৭) ও মোহসিন (৩০) রিক্সা চালান।

ছোট মেয়ে নুরুন্নাহার বেগমের ছেলে ইদ্রিস ওই এলাকায় অবস্থাপন্ন পরিবারের জমিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন; মেয়ে শাহিদা তার স্বামীর সঙ্গে থাকেন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে সুফিয়ার বাড়িতে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ কাঠা জমির ওপর হালিমা ও নুরুন্নাহারের পৃথক দুটি ভিটে। এর বাইরে তাদের চাষযোগ্য কোনো জমি নেই।

'কিস্তি শোধ করতে আবার ঋণ'

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে এক বছরে দুই দফায় পাঁচশ ৬০ টাকা ঋণ নেন সুফিয়া খাতুন। এটি ছিলো আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর আগে মুহম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকর গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় দেওয়া প্রথম ঋণ।

প্রায় ৩৫ বছর পর সুফিয়ার ছোট মেয়ে নুরুন্নাহার বেগম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদককে (চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়) বলেন, "আমার আম্মা (সুফিয়া খাতুন) ক্ষুদ্র ঋণের প্রথম গ্রাহক। তাকে দেখিয়ে ইউনূস সাহেব দেশে বিদেশে অনেক নাম করেছেন, কিন্তু আমাদের কিছুই হয়নি।"

"বেতের তৈরি মোড়াসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির ব্যবসা করতে আম্মা ওই ঋণ নেন," জানিয়ে তিনি বলেন, "চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছিলো। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে আম্মাকে অন্যজনের কাছ থেকে আবার ঋণ নিতে হয়েছিলো।"

এরপর থেকে সুফিয়া বা তার পরিবারের কোনো সদস্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আর ঋণ নেননি বলে জানান তিনি।

'ঋণগ্রহীতাদের অবস্থা কেউ খতিয়ে দেখেনি'

হালিমা বেগমের ছেলে বাবুল বলেন, "ইউনূস সাহেব নোবেল পাওয়ার পর অনেক পত্রিকা ও টিভির সাংবাদিক এসে আমাদের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

"গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘরের পাশের দোতলা পাকা দালান দেখিয়ে দিয়ে ছবি তোলায়।"

পাশের দালানটি সুফিয়া খাতুনের ভাইপো আবুধাবী প্রবাসী জেবল হোসেনের।

বর্তমানে দেশে থাকা জেবল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ক্ষুদ্রঋণের প্রকল্প দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস নোবেল পেয়েছেন। দেশে বিদেশে এর সুফল নিয়ে বড়বড় বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের কী অবস্থা তা কেউ খতিয়ে দেখেনি।"

তিনি প্রথম ঋণগ্রহীতা সুফিয়া খাতুনের পরিবারের উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেন।

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর মুহম্মদ ইউনূস এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জোবরা গ্রামে এসেছিলেন। সেসময় সুফিয়ার পরিবারের সদস্যরা কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে জানান নুরুন্নাহার ও জেবল।

'পরে কখনো ঋণ নিইনি'

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অবস্থার উন্নতি করতে না পারা আরেকজন জোবরা গ্রামের মোহাম্মদ হানিফ। নুরুন্নাহারের প্রতিবেশি হানিফ ১৯৮৬ সালে দুহাজার টাকা ঋণ নেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ওই টাকায় তিনি একটি গরু কিনেছিলেন। তবে কিস্তির টাকা নিয়মিত শোধ করতে না পেরে সেই গরু বিক্রি করে সাত মাসে দুহাজার আটশ টাকা পরিশোধ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংককে।

"ক্ষুদ্র ঋণ গরীবদের জন্য বলা হলেও তা ঠিক নয়," মন্তব্য করে হানিফ বলেন, "পরে আর কখনো লোন (্ঋণ) নিইনি।" তিনি এখন চাষাবাদ করে কষ্টে সংসার চালান।