ময়মনসিংহ, আগস্ট ২৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সোয়াইন ফ্লু'র সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে ব্যাপক গণসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অণুজীব বিজ্ঞানীরা। এব্যাপারে গাফিলতি হলে শীতে এ ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের গ্যালারিতে আয়োজিত 'সোয়াইন ফ্লু-বাংলাদেশে বিস্তার রোধে করণীয়' শীর্ষক সেমিনারে অণুজীব বিজ্ঞানীরা এ অভিমত দেন।
তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এইচ১এন১ ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা বাংলাদেশেই আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোতাহার হোসেন মণ্ডলের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল।
অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মমতাজুর রহমান এবং বাকৃবি হেলথ কেয়ার সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়েজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত ২০ জুন বাংলাদেশে এ ভাইরাসে একজন আক্রান্ত হওয়ার পর এপর্যন্ত আক্রান্ত ১০৪ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে এবং কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। সরকার সোয়াইন ফ্লুর সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশের সীমান্তবর্তী মোট ১৬টি চেকপোস্ট, বিমানবন্দর এবং নৌবন্দরগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে আলিমুল ইসলাম বলেন, "আরো শক্তিশালী কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করতে হবে। কারণ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সোয়াইন ফ্লু অনেকটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এব্যাপারে জনগণকে আতঙ্কিত না করে তাদের দ্রুত সচেতন করতে হবে।"
পাশাপাশি পালিত শুকর এবং তার পালনকারীরা সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস বহন করছে কি না পরীক্ষার মাধ্যমে সেব্যাপারে দ্রুত নিশ্চিত হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
নজরদারি এবং সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে গাফিলতি করা হলে আগামী শীতে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস মহামারী আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই অণুজীব বিজ্ঞানী।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, ৪-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস একমাস পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে পারে।
ড. আলিমুল আরও বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হলেই সোয়াইন ফ্লু হয়েছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। কারো শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর চেয়ে বেশি এবং সেইসঙ্গে মাংসপেশীতে ব্যথা, তীব্র মাথা ব্যথা , গলা ব্যথা, হাঁছি-কাশি, বমি এবং ডায়রিয়া হলে সেই ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বাড়িতে আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং রোগীসহ বাড়ির সবার ডিটারজেন্ট অথবা সাবানে পরিস্কার করা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এ অবস্থায় রোগীর ব্যপারে যাবতীয় তথ্য নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জানাতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে।
অ্যাজমা রোগী, ডায়াবেটিস রোগী, গর্ভবতী মহিলা, ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু, ৬৫ বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি এবং ফুসফুস আক্রান্তজনিত যে কোনো রোগী সোয়াইন ফ্লু ঝুঁকিতে থাকে।
উপাচার্য সাত্তার মন্ডল বলেন, সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এএল/এইচএ/২০১১ ঘ.