প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে: মুহিতুল

বঙ্গবন্ধু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম বলেছেন, তার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। (আরো তথ্যসহ)

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2009, 01:01 AM
Updated : 25 August 2016, 10:23 AM

বঙ্গবন্ধু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম বলেছেন, তার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মামলা করতে গিয়ে বাধার মুখে ব্যর্থ হয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ মুহিতুল।

বৃহস্পতিবার শেখ মুজিবকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল নাকচ করে হত্যাকারীদের ফাঁসি দেওয়ার হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

রায়ের সময় মুহিতুলও ছিলেন আদালতে।

রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ৩৪ বছর আগে জাতির মুখে যে কলঙ্ক লেপন হয়েছিল, তা দূর হল।

“বাংলার মানুষের সঙ্গে আমিও খুশি”, বলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মুহিতুল।

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন বুকে যন্ত্রণা নিয়ে অপেক্ষা করেছি এমন একটি দিনের। আজ সেই দিন এসেছে, জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।”

১৫ অগাস্টের ঘটনা স্মরণ করে মুহিতুল বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সেদিন বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারিনি, বাঁচাতে পারিনি শিশু রাসেলকেও।

“সেদিন রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘ভাইয়া, ওরা তো আমাকে মারবে না?’ আমি বলেছিলাম, ‘না তোমাকে মারবে না।’ কিন্তু ঘাতকরা আমার কথা মিথ্যা প্রমাণ করে শিশু রাসেলকেও হত্যা করে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মুহিতুল।

গত ৪ অক্টোবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহিতুল বলেন, “তখন (হত্যাকাণ্ডের পর) মামলা করতে লালবাগ থানায় গিয়েছিলাম। কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা আমার এজাহারটি নিয়ে ওসির কক্ষে যান এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসেই আমার গালে পরপর দুই থাপ্পড় মেরে বলেন, ‘হারামজাদা তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি’।

“সেদিন আমাকে থানা থেকে বের করে না দিলে ঘাতকরা হয়তো আমাকে বাঁচিয়ে রাখতো না। ঘাতকরা মনে করেছে, ‘শালারে’ কেন বাঁচিয়ে রাখলাম”, বৃহস্পতিবার বলেন মুহিতুল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করার জন্য ১৯৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে।

দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করলে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। এরপর ওই বছরেই মুহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন।

মামলা দেরিতে করার বিষয়ে মুহিতুল বলেন, “আমি ভেবেছিলাম যখন মনে করব, সুষ্ঠু বিচার পাব, সরকার আমাকে নিরাপত্তা দেবে, তখন মামলা করব। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জীবনের নিরাপত্তা পেয়ে মামলা দায়ের করি।”

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট প্রথমে বিভক্ত রায় দিলে পরে তৃতীয় বেঞ্চে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সুপ্রিম কোর্টে বিচারক সঙ্কটের কারণে দীর্ঘ সময় আপিল শুনানি ঝুলে ছিল।

“বিচারে বিলম্বের বিষয়ে হত্যাকারীদের মদদ ছিল বলে মনে করি,” বলেন বাদি মুহিতুল।

তিনি বলেন, “আজ মহান আদালতে সুষ্ঠু ও প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি, সুবিচার পেয়েছি। আদালতের কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরবি/পিসি/এফএফ/কিএইচ/এমআই/১৫১৩ ঘ.