জামায়াতের নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা বাতিলের দাবি জানালেন কাদের সিদ্দিকী

কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বীর উত্তম আব্দুল কাদের সিদ্দিকী যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া 'দাঁড়িপাল্লা' ন্যায় বিচারের প্রতীক হওয়ায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর এই নির্বাচনী প্রতীক বাতিল করারও দাবি জানান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2007, 02:29 PM
Updated : 13 Dec 2016, 03:46 PM

রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি এই দাবি জানান। আলোচনা শেষে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, "যারা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা - ধর্ষণ করেছে, লুটপাট করেছে, তারা যতদিন এ জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইবে, ততদিন তারা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, আমরা সে ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছি।" (বিস্তারিত)

নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার কমিশন জনতা লীগের সঙ্গে এই আলোচনায় বসে। সাংবাদিকদের কাদের সিদ্দিকী বলেন, "জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, এটি পত্র - পত্রিকায় দলিল হয়ে আছে। আর তাদের নির্বাচনী প্রতীক 'দাঁড়িপাল্লা' হচ্ছে সারা বিশ্বে স্বীকৃত ন্যায় বিচারের প্রতীক। এ কারণে আমরা জামায়াতের নিবন্ধন ও তাদের প্রতীক বাতিল করার দাবি জানিয়েছি।"

কাদের সিদ্দিকী জানান, তাদের পক্ষ থেকে ওই দুটি দাবি করা ছাড়াও বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা বহাল, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য ৩৩ শতাংশ রাখা এবং একাধিক আসনের প্রার্থীর জামানত পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাবিত বিধান বাতিল, রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন বাদে অন্য সব অঙ্গ সংগঠন রাখা, জেলা জজ অথবা সম মর্যাদার আইন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া -- ইত্যাদি প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দেয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, দুই কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম. সাখাওয়াত হোসেন, কমিশন সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরসহ আইন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০টায় আলোচনা শুরু হয়ে তা বেলা ১ টা পর্যন্ত চলে।

আলোচনা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া শেষ হলে কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। একই সঙ্গে আইনে পরিণত করার জন্য নির্বাচনী সংস্কার আইনের একটি পরিমার্জিত খসড়াও সরকারের কাছে পাঠানো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খসড়াটি আইনে পরিণত হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে। নতুন করে দলগুলোকে দেওয়া হবে নির্বাচনী প্রতীক।

গত ২৮ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়ে এ আলোচনা চলবে। বুধবার ইসলামী ঐক্য জোটকে দিয়ে কমিশন আলোচনা শুরু করে।

১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্বমূলক আদেশ, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী আচরণবিধি ও ২০০১ সালে প্রণীত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধির সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার নিয়েও কথা বলছে কমিশন। নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে এর আগে কমিশন সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের মতামত নিয়েছে।

কমিশনের ঘোষিত তালিকা অনুসারে এরপর ২০ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্রী পার্টি, ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টি, ৪ অক্টোবর জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), ৯ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু), ২২ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-রব), ২৫ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ২৮ অক্টোবর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-মোজাফফর), ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ১৫ নভেম্বর জাতীয় পার্টি (নাজিউর), ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং ২৯ নভেম্বর সাম্যবাদী দলের (এম-এল) সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আলোচনা হবে।