শ্রাবণের তৃতীয় দিন সোমবার দুপুরে হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি নামে রাজধানীতে। কিন্তু ঢাকার সবখানে এমনটা দেখা যায়নি, এছাড়া স্থায়ীও হয়নি বেশিক্ষণ।
আষাঢ়ের শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহের মধ্যে অস্বস্তিকর গরমে সর্বত্র হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছিল। তবে শ্রাবণের শুরুতে ছিল বৃষ্টির আভাস।
এরই মধ্যে বেলা ১২টার দিকে খানিক সময়ে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
সোমবার বিকালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, বৃষ্টি কম থাকায় সর্বত্র ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। এখনও রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকদিন তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, “ধীরে ধীরে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে এবং কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ প্রশমিত হবে বলে আভাস রয়েছে।”
গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে সর্বোচ্চ ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পার।
একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণও হতে পারে।
টানা গরমের মধ্যে সোমবার দুপুরে বৃষ্টি নামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনেককে নিজ থেকে ভিজতে দেখা যায় । ছবি: মাহমুদ জামান অভি
সপ্তাহখানেক ধরে চলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু্ তাপপ্রবাহের মধ্যে ‘হিট স্ট্রোক’ এবং ডায়রিয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে অন্তত ২৯২ জনের ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে।
রংপুরের বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, “তাপদাহে এখনকার মানুষ কুপোকাত। লোকজনের উপস্থিতিও খোলা জায়গায় তুলনামূলক কম রয়েছে।
“টানা কয়েকদিনের তাপপ্রবাহের মধ্যে হিট স্ট্রোকের অনেক রোগী আমাদের বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছে। ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকের রোগীদের সেবা কার্যক্রমে নিয়মিত তদারকি রাখা হয়েছে।”
তবে গরম আবহাওয়ায় এ ধরনের রোগীদের তুলনামূলক ভিড় থাকলেও মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
জাকিরুল ইসলাম বলেন, “রোগীদের কাউন্সেলিং ও হেলথ এডুকেশন জোরদার করা হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত গরমে ঠাণ্ডা পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা ডা. আসিফ ইশতিয়াক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাপপ্রবাহের মধ্যে ভ্যাপসা গরমে অনেকের হিট স্ট্রোকের প্রবণতা দেখা দেয়।
শারীরিক উপসর্গের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেহের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়, মানুষের পানিশূন্যতা দেখা দেয়। অস্বস্তিকর গরমে বমি বমি ভাব দেখা দেয়। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
গরম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের এমন মাত্রাতিরিক্ত গরম থেকে রেহাই পেতে ছায়াশীতল জায়গায় অবস্থান নিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরোনোর দরকার নেই।
“সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার বেশি বেশি পান করতে হবে। গরমের সময় অনিরাপদ পানি পান করলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
আরও খবর