সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে হতাশা প্রকাশ করে নূপর জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ক্লাস নাইনে পড়া মেয়েটিকে নিয়ে তিনি আর্থিক সংকটে পড়েছেন। স্বামীর পাওনা টাকাও বুঝে পাননি।
গত ২৫ মে বেলা ১১টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টালের লবির ছাদে ৫২ বছর বয়সী প্রকৌশলী সুব্রতের মৃতদেহ উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে কর্তৃপক্ষকে খবর দেয় পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়।
সুব্রতর মৃত্যুর ঘটনায় ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ওই রাতেই হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই স্বপন সাহা। সেখানে আসামির ঘরে অজ্ঞাতনামা লেখা থাকলেও ঘটনার বিবরণে ইন্টারকন্টিনেন্টালের প্রকৌশলী আশ্রাফুর রহিম এবং প্রকৌশলী আজিজার রহমানকে দায়ী করা হয়েছে।
এর মধ্যে আশ্রাফুর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেডের (বিএসএল) চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পদে আছেন। আজিজার আছেন প্ল্যানিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপক হিসাবে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা সুব্রত সাহা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডে (বিএসএল) প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছিলেন ২২ বছর ধরে। তার বাসা ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে।
বিএসএল এর মালিকানায় থাকা এ হোটেল পরিচালনা করছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ (এশিয়া প্যাসিফিক) (আইএইচজি)।
সুব্রত সাহা
“ঘটনার পর মামলা হয়েছে। মাস খানেক আগে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।“
স্বামীকে হারিয়ে আর্থিক দুর্দশায় পড়ার কথা তুলে ধরে নূপুর বলেন, “আমি একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আর্থিক কষ্টে আছি। আমাদের পাওনা টাকা এখনো বুঝিয়ে দেয়নি।"
সুব্রতর বন্ধু প্রকৌশলী রিয়াসাত সুমন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সুব্রত ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের’শিকার।
তিনি বলেন, “হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল একটি আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল। এই হোটেল সংস্কারের জন্য ৬০০ কোটি টাকার বাজেট ছিল। কিন্তু হোটেল সংস্কারে এত টাকা খরচ হয়নি। বাজেটের বেঁচে যাওয়া টাকা অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
“এজন্য প্রকৌশলী সুব্রত সাহাকে চাপ দিচ্ছিলেন তারা। তাদের এই অন্যায় প্রস্তাবে রাজি না হয় সুব্রত সাহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।"
প্রকৌশলী রিয়াসাত সুমন বলেন, “ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হতে চলছে। এখনো মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। হোটেল কর্তৃপক্ষ একেক সময় একেক ধরনের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।“
মামলার দুই আসামির নাম ধরে রিয়াসাত বলেন, "সুব্রত বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছে, হোটেলের প্ল্যানিং আ্যন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আশ্রাফুর রহিম ও একই বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আজিজার রহমান মিলে এই টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে।
“এজন্য তারা খরচের অতিরিক্ত বিল তৈরি করে সেই বিলে সুব্রতকে ও স্বাক্ষর করার জন্য দিচ্ছিল। কিন্তু এতে সুব্রত রাজি ছিল না। এর জের ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।"
সুব্রতর ওপর কিছুদিন ধরে তার কাজের বাইরে ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ আনেন রিয়াসাত। একই অভিযোগ নূপুর সাহাও করেছিলেন এর আগে।
রিয়াসাত বলেন, “ওই দুই কর্মকর্তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত প্রায় এক বছর ধরে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছিল। প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করলেও সম্প্রতি তাকে হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
“এছাড়া অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় তাকে কাজ করানো হত। কর্মক্ষেত্রে এসব হয়রানির কথা তিনি তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় বলেছিল।“
হত্যা মামলা দায়েরের পর ওই দুই কর্মকর্তা কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এখন তারা আবার অফিস করছেন বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রকৌশলী আশ্রাফুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যেসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তা নিয়ে আর কী মন্তব্য করব?"
আর প্রকৌশলী আজিজার রহমানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, “মামলার তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে সুব্রত সাহা আত্মহত্যা করেছেন।“
আর আশ্রফুর রহিম ও আজিজার রহমান মামলায় ‘এজাহারভুক্ত আসামি নন’ মন্তব্য করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তদন্তে যাকে অপরাধী মনে হবে, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, তদন্ত চলছে।“
সুব্রতর পাওনা পরিশোধের অগ্রগতি জানতে চাইলে বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সুব্রত সাহার স্ত্রীর আবেদন আমিই রেখেছি। এটা আইনি মতামতের জন্য পাঠিয়েছি। উত্তরাধিকার সনদ চাওয়া হয়েছে। আশা করছি এ মাসের শেষের দিকে তিনি তার পাওনা পাবেন। আমরা শতভাগ আন্তরিক।"
পুরনো খবর: