গত মাসে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কপালে ভাঁজে উঠেছিল লঞ্চ মালিকদের; যাত্রী টানতে ৩৫২ টাকার ডেকের ভাড়া কমিয়ে আনা হয়েছিল ২০০ টাকায়। তারপরও মিলছিল না প্রত্যাশিত যাত্রী।
তখন লঞ্চ মালিকরা বলছিলেন, তারা এখনই হতাশ হচ্ছেন না, যাত্রী আস্তে আস্তে ফিরবেই।
কোরবানির ঈদের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার ঢাকার সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের চাপ বাড়তেই দেখা যায়। তবে মালিকরা বলছেন, যাত্রী ‘আগের মতো নয়’।
আগামী রোববার কোরবানির ঈদ হবে, বৃহস্পতিবারই ছিল শেষ কর্মদিবস। ফলে এদিন অনেকে দুপুরে অফিস শেষে বাড়ির পথ ধরায় বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে বাড়ে ভিড়।
রহমানের মতোই পদ্মা সেতুতে না উঠে লঞ্চে যাচ্ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী জুয়েল হোসেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্ত্রী, দুই বাচ্চা নিয়ে চারজন, সঙ্গে ভারী বোঝা আছে। তাই এভাবে (লঞ্চে) যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।”
বৃহস্পতিবার বিকালে দেখা যায়, বরিশাল যাওয়ার জন্য পন্টুনে ভিড়ে আছে পারাবত ৯, পারাবত ১১, সুরভী ৯, সুরভী ৭, মানামী, সুন্দরবন ১১, কুয়াকাটা ২ ও কীর্তন ২ লঞ্চগুলো।
দুদিন আগেও যেখানে ডেকে যাত্রী পাওয়ার জন্য সাড়ে তিনশ টাকার ঢাকা-বরিশাল ভাড়া দুইশ টাকা নিত, এদিন নেওয়া হচ্ছিল আগের মতোই সাড়ে তিনশ টাকা। ভাড়া নিয়ে দরকষাকষির সুযোগও দিচ্ছিল না লঞ্চকর্মীরা।
গত কয়েক দিনে লঞ্চের ১৪০০ টাকার সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছিল, ডাবল কেবিনের ভাড়া ২৫০০ থেকে করা হয়েছিল ২০০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছিল, তারপরও বিকাল ৫টার দিকে লঞ্চগুলোতে অনেকেই কেবিন চেয়ে না পেয়ে ফেরত যাচ্ছিল।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের টিকেট বিক্রির টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি স্ত্রী ও দুই সন্তান দিয়ে এসেছেন বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তিনি ফোনে যোগাযোগ করে কেবিন ঠিক করলেও এসে দেখেন, তার জন্য কেবিন নেই।
শুধু সুন্দরবন নয়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় বরিশালগামী কোনো লঞ্চেই কেবিন ফাঁকা পাওয়া যায়নি। প্রতিটি লঞ্চে গড়ে পৌনে দুইশর মতো কেবিন রয়েছে।
লঞ্চের ডেক আর কেবিনে যাত্রীতে ভরা থাকলেও প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের মালিক আওলাদ হোসেন বলেন, “না, অনেক যাত্রী কম পাচ্ছি। ডেকে, উপরে আরও যাত্রী উঠানো যেত।”
কয়েকদিন আগেও ডেকে বরিশালের ভাড়া দুইশ টাকা নেওয়া হত, এখন কেন বাড়ল- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এখন সিঙ্গেল ট্রিপ (শুধু যাওয়া)। আসার সময় লঞ্চ খালি আসে। তাই ওই মূল্যে নেওয়া সম্ভবপর নয়।”
লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ৩৫ শতাংশ যাত্রী কম পাওয়া যাচ্ছে।
কোনো কেবিন তো খালি নেই- জানালে তিনি বলেন, “অন্য বছর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্তত ৫০০ ফোন পেতাম, কিন্তু এবার একটিও পাচ্ছি না। ওই যাত্রীরা তো এবছর এই পথে যাচ্ছে না।”
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৯০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়, আর অপেক্ষায় রয়েছে ২৫টি লঞ্চ। অন্যদিকে সদরঘাটে এসেছে ৮৫টি লঞ্চ।
বুধবার সদরঘাট থেকে ছেড়ে গিয়েছিল ৯৭টি লঞ্চ, আর এসেছিল ৮২টি লঞ্চ।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, লঞ্চঘাটকেন্দ্রিক সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতি পালায় ৭৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছে। এছাড়া রয়েছে র্যাব, নৌপুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্য।