দীর্ঘ অপেক্ষার সেই মিছিলে ছিলেন তৈরি পোশাককর্মী শেফালী বেগম। দুই সন্তানকে নিয়ে বিকাল থেকে চার ঘণ্টা মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকেট কিনে বসে ছিলেন তিনি। তার গন্তব্য নেত্রকোনার কলমাকান্দা।
শেফালী বললেন, “গার্মেন্টসে কাজ করি। ছুটি-ছাটা কম। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি, এটা যে কী আনন্দ মনের ভেতরে, বুঝাইতে পারুম না।
“কিন্তু কখন যে বাড়ি পৌঁছামু জানি না। দুশ্চিন্তায় আছি। হেই বিহাল বেলায় আইছি, বাসের খবর নাই।”
নেত্রকোনা-ময়মনসিংহের পথে ঢাকা্ এয়ারপোর্টের পর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ব্যাপক যানজট দেখা দিয়েছে। ফলে বাসগুলো আসতে দেরি হচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর এলাকার দিকে বাস ছেড়ে যায়। প্রতিটি গন্তব্যের বাসের কাউন্টারেই দেখা গেছে যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন।
শুক্রবার থেকে পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি শুরু হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে পোশাককর্মীদের চাপ বেড়েছে টার্মিনালগুলোতে। ফলে বাস না পেয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনেককে।
তিনি বলেন, “আজকে বৃহস্পতিবার বলে ভিড়টা বেশি। কারণ দুদিন পরেই ঈদ। দুপুরে মহাখালী এসে সন্ধ্যায় বাস উঠলাম কোনোমতে। বাস উঠতে পেরেছি এটাতেই খুশি লাগছে।”
মহাখালীতে থাকেন কিন্তু বাড়ি কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, এরকম অনেকে ভিড় করছিলেন সায়েদাবাদগামী বাসের অপেক্ষায়। কিন্তু মানুষের তুলনায় বাস কম ছিল বলে সেখানেও ছিল অপেক্ষা।
বনানী শপিং মলের একটি দোকানের কর্মচারী নোয়াখালীর বাসিন্দা মো. শরীফ বাস না পেয়ে হাঁটতে থাকেন, সঙ্গে ছিলেন তার মা।
মহাখালীর নাবিস্কোতে দীর্ঘক্ষণ লোকাল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন সরকারি একটি অফিসের কর্মচারী আব্দুর জাব্বার, তিনি যাবেন চট্টগ্রামে।
জব্বার বলেন, “পরিবার আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি, আমি অফিস শেষ করেই চলে আসছি বাড়ি যাব। এখন সায়দাবাদ যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি, বাস পাচ্ছি না।”
সায়েদাবাদ টার্মিনালেও হাজার হাজার মানুষকে বাসের অপেক্ষায় দেখা গেছে। তবে যাত্রাবাড়ীর পর চট্টগ্রামমুখী মহাসড়কে যানজট তেমন ছিল না।
তবে যানজট ছিল উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে। সকালে দুটো দুর্ঘটনার পর টাঙ্গাইলে দেখা দেয় ব্যাপক যানজট। গাড়ির চাপে বিকালে যানজট গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে সাভারের নবীনগর পর্যন্ত এসে যায়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী আব্দুল আওয়াল তার পরিবার নিয়ে এসেছেন গুলিস্তান বিআরটিসির টার্মিনালে। পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুরে গ্রামে যাবেন ঈদ করতে।
আওয়াল বলেন, “আগে সাধারণ পরিবহন দিয়ে মাওয়া গিয়ে তারপর লঞ্চ বা স্পিডবোটে ওপার গিয়ে বাড়ি যেতাম। এখন সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি চলে যাব। কিন্তু গাড়ির যে অবস্থা, কয়টা বাজে টিকিট পাইতে তার কোনো খবর নাই। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি।”
ফরিদপুরগামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আহসান বলেন, “এবার পদ্মা সেতু হয়ে যাব। টিকেট পেতে একটু ঝামেলা হচ্ছে। তবে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের আগে এটুকু ঝামেলা হবে, এটাই স্বাভাবিক।”
বিআরটিসির কাউন্টারে অনেক যাত্রী বাস দেরিতে ছাড়ার অভিযোগ করছেন। সে বিষয়ে বিআরটিসি কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা হাসান মাহমুদ বলেন, “বাবুবাজার ব্রিজের পর থেকেই প্রচণ্ড জ্যাম। গাড়ি আসতে দেরি করছে, তাই গাড়ি ছাড়তে একটু দেরি হচ্ছে।”
পদ্মা সেতু চালুর পর গুলিস্তান থেকে মাওয়ার অনেক বাসও এখন এক্সপ্রেসওয়ের শেষ সীমা ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাচ্ছে।
তেমনই একটি পরিবহন প্রচেষ্টা পরিবহনের হেলপার রাকিব হোসেন বলেন, “লোকাল বাস হলেও আমাদের বাসে যাত্রী ভালোই। গত ঈদ থেকে এবার বেশি। গুলিস্তান থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ভাড়া ২৫০ টাকা।”