ইউক্রেইন যুদ্ধ: প্রবাসীদের 'জীবন রক্ষার' স্বীকৃতি পেলেন সুলতানা লায়লা

ইউক্রেইনে যুদ্ধের মধ্যে প্রবাসীদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2022, 03:11 PM
Updated : 7 July 2022, 05:44 PM

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্রদূতকে কূটনৈতিকদের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদকে’ ভূষিত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার হাতে পদক তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেইনে বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে অতর্কিত হামলা শুরু হলে সেখান থেকে প্রাণভয়ে পালাতে থাকে মানুষ।

বহুমুখী আক্রমণের মুখে দেশটি থেকে বেরুনোর পথ হয়ে দাঁড়ায় ইউক্রেইনের পশ্চিম প্রান্তের পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও মলদোভা সীমান্ত। তবে শরণার্থীর ঢল ছিল পোল্যান্ডের দিকেই।

রাশিয়ার মুহুর্মুহু হামলার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে ইউক্রেইনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেসময় যুক্ত করে পোল্যান্ড দূতাবাস। প্রতি গ্রুপে সংযুক্ত করা যাচ্ছিল ২৫৬ জন করে।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাবে ইউক্রেইনে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি ছিলেন। তবে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে বাংলাদেশির সংখ্যা এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মনে করা হয়।

ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে সংযুক্ত প্রবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে কয়েকটি গ্রুপ খুলতে হয় দূতাবাসকে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে প্রবাসীদের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও যুক্ত হন মিশনগুলোর কর্মকর্তারা।

ওয়ারশ দূতাবাসের পাশাপাশি নিকটবর্তী কয়েকটি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাঠানো হয় পোল্যান্ড সীমান্তে। কয়েকশ’ মাইল পেরিয়ে আসা প্রবাসীদের সীমান্ত পারাপারে সহযোগিতা করেন তারা।

এসব উদ্যোগ ছাড়াও আটকে পড়া বাংলাদেশিদের যোগাযোগের জন্য কয়েকটি মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের হটলাইন চালু করা হয়।

বাংলাদেশিদের উদ্ধার কার্যক্রমের মধ্যেই ২ মার্চ ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে হামলা হয় বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে। এতে নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।

এরপর ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজে বেঁচে থাকা ২৮ নাবিক ও হাদিসুরের মরদেহ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয় ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

৩ মার্চ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্মীদের নামিয়ে এনে একটি শেল্টার হাউজের বাংকারে নেওয়া হয়। হাদিসুরের মরদেহও রাখা হয়েছিল বাংকারের ফ্রিজারে।

জাহাজ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর রোমানিয়া হয়ে গত ৯ মার্চ দেশে পৌঁছান ২৮ বাংলাদেশি নাগরিক। সবশেষ ১৪ মার্চ রোমানিয়া হয়ে হাদিসুরের মরদেহ দেশে আসে।

বৃহস্পতিবার ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ গ্রহণের পর সেসব দিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি অনেক কঠিন ছিল।

“যুদ্ধরত দেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে, আমার সাথে আমার পুরো দূতাবাস ২৪ ঘণ্টাই বলা যায় কাজ করেছে।

“পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশি ও অন্যান্য দূতাবাস থেকেও কয়েকজন কর্মকর্তা আমাদের সাথে যোগ দিয়ে আমার সাথে কাজ করেছিলেন। তাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল কাজ করতে।”

পাসপোর্টধারীদের পাশাপাশি পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশিদের পোল্যান্ডে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ায় দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ দেন রাষ্ট্রদূত।

একই সঙ্গে আটকে পড়া প্রবাসীদের কাছে তথ্য পৌঁছাতে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা সুলতানা লায়লা।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “ইউক্রেইনে বসবাসরত প্রবাসীদের নিরাপদে স্থানান্তর এবং এসংক্রান্ত ধাক্কা প্রাথমিকভাবে সামাল দিয়েছে আমাদের ইউক্রেইন সংলগ্ন তিনটি মিশন। ওয়ারশ, বুখারেস্ট ও ভিয়েনা।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবন রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন সুলতানা লায়লা। এক্ষেত্রে তাকে পদক দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

পোল্যান্ড সীমান্তে বাংলাদেশিদের ফেরানোর কাজে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা অনির্বাণ নিয়োগি, মাসুদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও তৌহিদ ইমামসহ অন্যদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন প্রতিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ওয়ারশ দূতাবাসের সেই সময়ের কাউন্সেলর ও বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক অনির্বাণ নিয়োগীর হাতেও সনদ তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে গতবছর থেকে ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ দেওয়া শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সুলতানা লায়লার পাশাপাশি এ বছর পদক পেয়েছেন ঢাকায় জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে তাকে এ পদক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “এই পদকপ্রাপ্তির মাধ্যমে আমি নব সংকল্পে এগিয়ে যাব এবং আমাদের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিতে আমার প্রচেষ্টা কয়েকগুণ বাড়াব।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় পাশে থাকবে জাপান। অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের স্বার্থে একজন অংশীদার হিসেবে বাস্তবিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।”

আরও খবর: