নড়াইলে শিক্ষক হেনস্তার পেছনে পরিচালনা পর্ষদের দ্বন্দ্ব: মাউশি

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ রটিয়ে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হেনস্তা করার পেছনে শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের’ যোগসূত্র পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2022, 02:38 PM
Updated : 7 July 2022, 02:38 PM

গত ১৭ জুন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পড়ানোর ঘটনা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলে।

পরে তদন্তে নেমে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে কলেজে নানা দ্বন্দ্বের চিত্র পায় মাউশির তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের দ্বন্দ্ব এ ঘটনাকে প্রভাবিত করেছে।”

একই চিত্র এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও। সেই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আখতার হোসেনকে ‘নেতিবাচক ভূমিকার জন্য’ এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদকে ‘নির্লিপ্ততার কারণে’ কারণ দর্শাও নোটিস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন ওই কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন।

এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। এরই মধ্যে ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে।

সে সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। তখন পুলিশ ওই ছাত্রের সঙ্গে অধ্যক্ষকেও থানায় নিয়ে যায়। তবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।

মো. আকতার হোসেন

ওই ঘটনার পর মাউশির খুলনা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনুর রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করে অধিদপ্তর।

তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ আসার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাহেদুল খবির চৌধুরী।

মাউশির এই পরিচালক বলেন, “কলেজের অভ্যন্তরীণ নানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। ম্যানিজিং কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে, সেগুলো এই ঘটনাকে প্রভাবিত করেছে।

“এ ঘটনায় কোনো কোনো শিক্ষকের মদদ থাকার বিষয় আছে। অধ্যক্ষ নিয়োগের একটা বিষয়েও শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা গেছে।”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গভর্নিং বডির বিষয়গুলো সাধারণত শিক্ষা বোর্ড দেখে। আমরা বোর্ডকে বলব, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

"এখানে যাদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে, শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু ব্যবস্থা হয়ত সরাসরি আমরা নিতে পারব না, আমরা মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।"

স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার সময় কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতার হোসেনকে ইতোমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায়  ‘নেতিবাচক ভূমিকার জন্য’ ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  শিক্ষক আখতার হোসেনকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া মো. রহমতউল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়, যিনি খুলনার ব্রজলাল (বিএল) কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের সম্মান শ্রেণির ছাত্র।

পাশাপাশি শিক্ষককে হেনস্তা করার ঘটনায় ‘নির্লিপ্ত’ থাকায় মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের  গভর্নিং বডিকেও শোকজ করা হয়েছে।

উপাচার্য মো. মশিউর রহমান দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় প্রাথমিক সম্পৃক্ততার কারণে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও কোনো সম্পৃক্ততা পেলে তখন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুরনো খবর: