জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যাঘাত ঘটছে, তা সামাল দিতে লকডাউনের সময়ের মত হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
Published : 07 Jul 2022, 07:30 PM
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। তার ফলে সম্প্রতি দেশজুড়ে লোড শেডিং ফিরে এসেছে।
২০০৯ সালের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে ‘বড় পরীক্ষার’ মধ্যে পড়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “যে এলএনজির দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৫ ডলার, সেটা এখন ৪১ ডলার হয়ে গেছে। ৭১ ডলারের ডিজেল এখন ১৭৭ ডলারে উঠে গেছে। ব্লুমবার্গসহ কিছু মিডিয়া সেটা ৬০০ ডলারে পৌঁছে যাওয়ার আভাস দিচ্ছে।”
এ পরিস্থিতিতে আপাতত সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া বিকল্প দেখছেন না তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, “সব বিতরণ সংস্থাসহ খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি। যা বোঝা গেছে, একমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা যায়।
“সবাইকে নিজ দায়িত্বে সাশ্রয়ী হতে হবে; এটা সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রী বলেছে বলে নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজ দায়িত্ব থেকে এখন সাশ্রয়ী হতে হবে। বৈঠকে আমরা সাশ্রয়ী হওয়ার কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।”
বৈঠকের সুপারিশগুলো হচ্ছে-
>> ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।
>> সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামানো যাবে না।
>> আলোকসজ্জা আপাতত বন্ধ করতে হবে।
>> বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
>> বাজার, মসজিদ, শপিংমলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
>> যে কোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
লোড শেডিং পরিস্থিতি আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে বলে আভাস দিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “আগামী সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। দামি তেলভিত্তিক ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে তখন সেগুলোকে কাজে লাগানো যাবে।”
অবশ্য এই সময়ের মধ্যে ‘সব ধরনের সাশ্রয়ী নীতিকৌশল’ অবলম্বন করে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে বিদ্যুতের সংকট ‘অতটা হবে না’ বলে মনে করছেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।