বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে এলএসডিতে আসক্তি, পরে ‘মাদক কারবারি’

ক্রেতা সেজে এলএসডি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ‘মাদক কারবারিকে’ গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 07:10 PM
Updated : 6 July 2022, 07:10 PM

গ্রেপ্তার নাজমুল ইসলাম বিশ্বাস (২৬) বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এলএসডিতে আসক্ত হয়ে পড়েন এবং পর্যায়ক্রমে নিজেই এটির বেচাকেনায় জড়িয়ে যান বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, মাদক কেনার ফাঁদ পেতে গত মঙ্গলবার রাতে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ভাটারা এলাকার জামিয়া মাদানি এলাকায় গিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পরে কেনার উছিলায় তার কাছ থেকে এবং বসুন্ধরা আবাসিকে তার ভাড়া ফ্লাট থেকে মোট ১৩৮ ব্লট এলএসডিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৯৬টি রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এবং ৪২টি হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ।

মাদক বিশ্বে এলএসডি হিসেবে পরিচিত লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইডকে বলা হয় 'সাইকাডেলিক ড্রাগ'। বাংলাদেশে মাদক হিসেবে নিষিদ্ধের তালিকায় থাকা এলএসডি গ্রহণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করে। আশেপাশের বাস্তবতা অনুভব হয় ভিন্নভাবে।

গ্রেপ্তার যুবককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাজল জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে অধ্যায়নকালীন সময় নাজমুল এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। এরপর বিদেশে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন মাধ্যমে এলএসডি সংগ্রহ করা শুরু করেন। এভাবে লেখাপড়া চলাকালীন সময়ের এক পর্যায়ে এ কারবারে জড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, “পরে নাজমুল এটা আর ছাড়তে পারেননি। এটাই তার পেশা হয়ে যায়।

“বিদেশে অধ্যয়নরত বন্ধুদের থেকে সে এই মাদক সংগ্রহ করত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। পরে ডার্ক ওয়েব ও বিটকয়েন ব্যবহার করে এই মাদক বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে।”

তাদের ধরতে বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টের খুঁজে পাওয়া খুবই সমস্যা। তারা একেক সময় একেক ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে।

মাদকের কারবারের সঙ্গে যুক্ত সম্ভাব্যদের একটি তালিকা বা নাম মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণের কাছে রয়েছে জানিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কারবারিকে সবসময় মনিটরিং করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাজল বলেন, এর আগে নাজমুল একই ধরনের মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিছুদিন আগে সে জামিনে বের হয়ে আসে।

“আমরা জানতে পারি জামিনে বের হওয়ার পর আবার সে এই এলএসডির ব্যবসা শুরু করেছে। এরপরেই ক্রেতা সেজে তাকে ধরা হয়।”

ভাটারা এলাকার আটকের সময় ২৫ ব্লট রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এবং পরে নাজমুলের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ভাড়া ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে ৭১ ব্লট রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এবং ৪২ ব্লট হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি পাওয়া যায় বলে দাবি করেন অতিরিক্ত পরিচালক কাজল।

তিনি বলেন, “যারা এসব ব্যবসা করেন বা আসক্ত তাদের অধিকাংশই দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণির তরুণ সমাজ। তারা যেসব প্রযুক্তি বা অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কেনাবেচা করে তাদের সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ রাখাটা দুষ্কর।”

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৯ সালে ১৫ জুলাই ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএসের একটি বাড়ি থেকে এলএসডির ২৫টি ব্লট এবং ৫ মিলিলিটার তরল এলএসডি উদ্ধার করে। দেশে এলএসডির চালান আটকের ঘটনা সেটিই প্রথম।