তার কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে সোমবার রাজধানীতে নিজ শরীরে আগুন দিয়ে কুষ্টিয়ার ঠিকাদার গাজী আনিসের আত্মহত্যার ঘটনায় বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে নুরুল আমিনের সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে র্যাব।
আনিসের এমন মৃত্যুতে বড় ভাই নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার দিনই তাদের উত্তরা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা আত্মগোপনে চলে যান।
র্যবের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৩ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে জানিয়ে তিনি বলেন, “কাকরাইলের নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে উত্তরার এক আত্মীয়ের বাসায় তারা আশ্রয় নেন। আমরা সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করি।”
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে গাজী আনিসের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করলেও দাবি করা টাকার পরিমাণ নিয়ে ভিন্ন কথা বলেন হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন।
মামলার এজাহারে লভ্যাংশসহ ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার বেশি দাবি করে বলা হয়েছিল, ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেও না পেয়ে কুষ্টিয়ায় হেনোলাক্সের দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন আনিসুর।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, “টাকার পরিমাণ এত নয় দাবি করে নুরুল আমিন আমাদের বলেছেন, আনিসের সাথে তাদের একটা লেনদেন আছে, তবে এত টাকা নয়।”
তবে সেই লেনদেনের অর্থ কী পরিমাণ সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেনি র্যাব।
বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা বের করবেন জানিয়ে বলা হয়, নুরুল আমিন কিংবা তার কোম্পানি আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং এর কাছে আর কারো পাওনা থাকার কোনো তথ্য নেই র্যাবের কাছে। কেউ কোনো অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আশির দশকের শুরুতে হোমিও কলেজ থেকে পাশ করার পর রাজধানীর গোপীবাগে ‘কাদের হোমিও হল’এ চাকরি নেন নুরুল আমিন। এখানে প্রায় ১৫ বছর চাকরি করেন।
চাকরি করা অবস্থায় ১৯৯১ সালে ‘হেনোলাক্স’ নামে একটি মুখ ফর্সা করার ক্রিম তৈরির কোম্পানি তৈরি করেন। পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরন করেন।
এই কোম্পানি থেকে ‘হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম’, ‘হোনোলাক্স স্পট ক্রিম’, ‘হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম’, ‘হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল’ নামে বিভিন্ন ধরণের পন্য বাজারজাত করা শুরু করেন।
গ্রেপ্তারের পর নুরুল আমিন র্যাবকে জানিয়েছেন, সে সময় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সে রকম কোনো কোম্পানি ছিল না। ফলে সারা দেশে তাদের পণ্যের এক চেটিয়া প্রসার ঘটে।
পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি আমিন হারবাল কোম্পানি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “এই ব্যবসা করেই নুরুল আমিন কাকরাইলে একটির ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে একটি চারতলা ভবন, কদমতলীর মোহাম্মদবাগে হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি করেন।”
তবে ওই ফ্যাক্টরিতে এখন হেনোলাক্সের পণ্য তৈরি হয় না। সেখানে খান ফুড প্রোডাক্টস, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস, জেকে এগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছেন নুরুল আমিন।
বর্তমানে ‘আমিন হারবাল কোম্পানি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু আছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন সেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালক হিসেবে দেখাশোনা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে গাজী আনিসের পরিচয় হয়। পরের বছর তারা ভারতে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানে একই হোটেলে ওঠেন এবং তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
এ সময় নুরুল আমিন হোনোলাক্স চালু করার জন্য বিনিয়োগ করতে আনিসকে আনুপ্রাণিত করেন। পরে নুরুল আমিনের কথায় আশ্বস্ত হয়ে প্রথমে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন গাজী আনিস।
পরিবারের সদস্য এবং আনিসের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে র্যাব জানতে পারে আনিসুর এক কোটি টাকা ছাড়াও পরে আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
এসবই নুরুল আমিনের প্ররোচনায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় র্যাব।
আরও খবর