ঈদে বাইক আটকাতে গেলেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

দুর্ঘটনা এড়াতে ঈদের সময় মোটর বাইক চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা সরকার দিয়েছে, তা কার্যকর করতে গেলেই বরং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 12:08 PM
Updated : 5 July 2022, 12:08 PM

এই মত প্রকাশ করে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা ঈদের সময় মোটর বাইক চলাচলে বিধি-নিষেধ তুলে দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।

রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালুর পর দেশে মোটর সাইকেল চলাচল অনেক বেড়েছে। এরপর গত ঈদে দূর যাত্রায়ও মোটর সাইকেলের যাত্রী হন অনেকে। আবার এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মোটর বাইককেও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে সরকার কোরবানির ঈদের আগে-পরে মোট সাত দিন মহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। সেই সঙ্গে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটর সাইকেল যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাইড শেয়ারের বাইক অন্য স্থানে চালানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

এনিয়ে বাইকারদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিবৃতিতে বলা হয়, রাইড শেয়ারকারী মোটর সাইকেলের সঠিক কোনো সংখ্যা বিআরটিএ বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। ফলে কোনটি রাইড শেয়ারিংয়ের মোটর সাইকেল, কোনটি ব্যক্তিগত মোটর সাইকেল, তা আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই।

এই পরিস্থিতিতে ঈদের সময় বাইক আটকাতে গেলে তা সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

“চলার পথে কোথাও কোথাও সড়কের মাঝপথে দাঁড়িয়ে পুলিশের সদস্যরা দ্রুতগতির মোটর সাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। কাগজপত্র পরীক্ষার এই পদ্ধতি সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই পরীক্ষার নামে কোনো বাইকার যাতে হয়রানী বা চাঁদাবাজির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

যাত্রী কল্যাণ সমিতি গতি সীমিত করাসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চলার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

মোজাম্মেল হক বলেন, গত ঈদে প্রায় ২৫ লাখ মোটর সাইকেল দেশের বিভিন্ন সড়কে নামায় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে, যদিও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে।

তিনি বলেন, “গণপরিবহন সঙ্কট, বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রেলের টিকেট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটের কারণে মানুষ মোটর সাইকেলের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে।

“তাই আপাতত গণপরিবহন সঙ্কট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটর সাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ না করে এই বাহনটির স্পিড লিমিট করে দেওয়া, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া, পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়ার পাশাপাশি এই বাহনটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।”

তবে মোটর সাইকেলকে গণপরিবহন সঙ্কটের সমাধান না ভেবে তা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার আহ্বান জানান মোজাম্মেল।

বর্তমানে দেশে ৩৭ লাখের বেশি মোটর সাইকেল রাস্তায় চলছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “নানা কারণে ক্রমে ক্রমে মানুষ মোটর সাইকেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনটি কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের আদলে গণপরিবহনের সংখ্যা কমানোর মধ্য দিয়ে যানজট কমাতে দেশে রাইডশেয়ারিং চালু করা হলেও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও মনিটরিং এর অভাবে এসব রাইডশেয়ারকারী যানবাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

“এমতাবস্থায় দেশের সড়কের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই বাহনটির নিবন্ধন বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে তার আগে গণপরিবহন সংকট সমাধান করা, যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন, যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।”