ই-অরেঞ্জের প্রতারণা: সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

অনলাইন প্লাটফর্ম ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের সাড়ে ২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পালিয়ে গিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 02:21 PM
Updated : 4 July 2022, 02:21 PM

সোমবার কমিশনের এক সভায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শিগগির এই মামলা দায়ের করা হবে।”

সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের পরিদর্শক সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “নিজের পদ পদবি আড়াল করে দুর্নীতির সম্পৃক্ত অপরাধে ই-অরেঞ্জের এমএলএল কোম্পানি খুলে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের নিকট হতে অধিক লোভের প্রলোভন দেখিয়ে তার নিজ নামে ও তার সংশ্লিষ্টদের নামে পরিচালিত ছয়টি ব্যাংকের ৩১ হিসাবে ২৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫০ টাকা জমা করে, পরবর্তিতে ২৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৯১৩ টাকা উত্তোলন করে।

“এ ঘটনায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অভিযোগ আনা হচ্ছে।“

এর আগে গত মার্চে সোহেল রানার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। কমিশনের উপ পরিচালক মো. মোনায়েম হোসেন অনুসন্ধান করে সম্প্রতি মামলার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দেন।

বরখাস্ত পরিদর্শক সোহেল রানা গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই। গত বছর অগাস্টে ই কমার্স প্লাটফর্মটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর কোম্পানিটিতে কাগজে কলমে কোনো মালিকানা বা শেয়ার না থাকলেও শেখ সোহেল রানা সেটা চালাতেন বলে খবর বের হয়েছিল।

ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং পালিয়ে যাওয়ার পথে ভারতে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পুলিশের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত বছরের ৩১ অগাস্ট ই-অরেঞ্জের মালিকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী এক গ্রাহক। সেখানে আসামির তালিকায় ওই সময় বনানীর থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সোহেল রানার নামও ছিল।

আদালত তখন গুলশান থানাকে মামলাটি ‘এফআইআর’ হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়। ২ সেপ্টেম্বর থানা ওই আবেদনকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে।

এরপর ৪ সেপ্টেম্বর সোহেল রানা ভারত-নেপাল সীমান্তে বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর আসে ভারতের সংবাদমাধ্যমে। পরে দেশটির পুলিশও তা নিশ্চিত করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সেদেশে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

ওই গ্রাহকের মামলায় অভিযোগ করা হয়, ই-অরেঞ্জের মালিক, কর্মচারীরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ ও বিক্রির নামে নগদ, বিকাশ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অর্থ নিলেও পণ্য না দিয়ে তার ৭৬ লাখ ৪১ হাজার ১০২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।

এ মামলার প্রধান আসামি সোনিয়া, তার স্বামী মাসুকুর এবং সিওও আমানউল্লাহ এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

সোহেল রানা ২০০৩ সালে পুলিশে এসআই হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই আরও ২১ জনের সঙ্গে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে চাকরি ফিরে পান।

আরও পড়ুন-