শুক্রবার এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকার স্বামীবাগ আশ্রম থেকে দুপুর ৩টার দিকে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও শুরু হয়েছে এ উৎসব।
‘রথোপরি বামন বা জগন্নাথকে দেখতে পেলে জীবের আর পুনর্জন্ম হয় না’-শাস্ত্রমতে এমন বিশ্বাসকে মনে ধারণ করে রথযাত্রা তিথি উদযাপনে অংশ নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
পরমাত্মায় জীবাত্মার মিলনকে ‘চিরমুক্তি’ বলে বিশ্বাস করে হিন্দুরা, সেই পারলৌকিক মুক্তি কামনায় ভগবানের কৃপা প্রার্থনা করে রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন করছেন ভক্তরা।
প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় রথযাত্রা। এর আটদিন পর অনুষ্ঠিত হয় উল্টো রথযাত্রা।
সেই হিসেবে শুক্রবার রথযাত্রায় শুরু হল এ উৎসব, আর একাদশী তিথিতে হবে প্রত্যাবর্তন। অর্থাৎ রথটি প্রথম দিন যেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আটদিন পরে আবার সেখানেই ফিরিয়ে আনা হয়। একে বলে ‘উল্টো রথ’।
রাজধানীতে প্রধান রথযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয় স্বামীবাগের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘে (ইসকন)। সকাল থেকে সেখানে দেখা যায় রথযাত্রার নানা আচার। দুপুরে বের হয় শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রাটি জয়কালি মন্দির মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, বক চত্বর, রাজউক ভবন হয়ে গুলিস্তান মোড়, পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে দিয়ে হাই কোর্ট মাজার গেইট এলাকা হয়ে দোয়েল চত্বর, এরপর শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল হয়ে পলাশী মোড় ঘুরে সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
ইসকনের অধ্যক্ষ চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারী করোনার কারণে আমরা গত দুই বছর উন্মুক্ত পথে রথযাত্রা করতে পারিনি, যে কারণে ভক্তদের মন খুব খারাপ ছিল। এবার আমরা বর্ণাঢ্য আয়োজনে রথযাত্রা করতে পারছি। এবারের রথযাত্রায় আমরা সকলের মঙ্গল ও কল্যাণের প্রার্থনা দিয়ে শুরু করেছি।”
মানভঞ্জনের পর শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন ফেরার তিথিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা রথযাত্রা উৎসব হিসেবে উদযাপন করে।
সেখানকার রথযাত্রার অনুসরণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব হয়। এ রথগুলোতে আসীন হন ভগবান জগন্নাথদেব, সুভদ্রা ও বলরামদেব।
রথযাত্রা ছাড়াও আট দিনের অনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে- শ্রীতৈচন্য চরিতামৃত পাঠ, ভজন-কীর্তন, পাশ্চাত্য দেশে জগন্নাতের রথযাত্রা বিষয়ক সেমিনার, রথাগ্রে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিষয়ক সেমিনার, যেই গৌর সেই কৃঞ্চ সেই জগন্নাথ শীর্ষক সেমিনার, মহাপ্রভুর নীলাচল যাত্রা বিষয়ক সেমিনার, পদাবলী কীর্তনসহ নানা অনুষ্ঠান।
স্বামীবাগে ইসকনের রথযাত্রা ছাড়াও ঢাকার তাঁতীবাজারে শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির, শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দিরেও রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে।