সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিনে সাধারণত দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চে ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু এদিন সদরঘাট ঘুরে লঞ্চগুলোতে ডেকে যাত্রীর সংখ্যা বেশি দেখা গেলেও কেবিনের যাত্রী কম দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাট থেকে চারটি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।এগুলো হলো সুন্দরবন -১০, সুরভী-৯, পারাবত-১৮ ও মানামী।
মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শুভ জানান, তার লঞ্চের ১৬৬টি কেবিনের মধ্যে অর্ধেকের কিছু বেশির টিকেট বিক্রি হয়েছে।
এই লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ২৫০০ টাকা।
লঞ্চটিতে ডেকেও যাত্রীর চাপ তেমন ছিল না, যেখানে চাদর কিংবা মাদুর বিছিয়ে শুয়ে-বসে যাওয়া যায়।
সুন্দরবন লঞ্চের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, তাদেরও অর্ধেকের কিছু বেশি কেবিন বিক্রি হয়েছে।
“হতাশ নই। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর ঈদের চার থেকে পাঁচ দিন আগে থেকে যাত্রী হয়; এত আগে হয় না। সেটা হোক বৃহস্পতিবার।”
এই লঞ্চগুলো রাতে ঢাকা ছেড়ে ভোরে বরিশাল পৌঁছবে। কিন্তু নতুন পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে চার-পাঁচ ঘণ্টায়ই বরিশাল যাওয়া যাচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার ধারণা করা হলেও কম খরচ এবং আয়েশি ভ্রমণের কারণে যাত্রী ততটা কমবে না বলে মনে করছেন লঞ্চ মালিকরা।
ঈদের ১০ দিন আগে ডেকে যাত্রী সংখ্যা তেমন না কমাটা তাদের সেই কথায়ই ভিত্তি দেয়, কেননা সেখানে ভাড়া বাসের ভাড়ার এক-তৃতীয়াংশ।
সাইফুল নামে এক দিনমজুর অর্থের বিষয়টি টেনে এনে বলেন, “২০০ টাকায় যেতে পারছি, এটাই অনেক উপকার। আর আরাম তো অনেক।”
সুন্দরবন-১০ লঞ্চের যাত্রী মোখলেছুর রহমানও বলেন, “এই যে ডেকে বসে আরামে যাচ্ছি; বাসে কি সেই আরাম মিলবে? আর অর্থের বিষয়টিও তো দেখতে হবে। ডেকে ২০০ টাকা করে নিচ্ছে, আর বাসের ভাড়া কত?”
তবে কেউ জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত যেতে হলে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে বাসেই যাবেন বলে জানান এই বৃদ্ধ।
লঞ্চে শিশু সন্তান নিয়ে পায়চারীরত এক নারী বলেন, “বাসে তো এই সুবিধা পাব না।”
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, এখন কেবিনের যাত্রী ৭০ শতাংশ হলেই তাদের চলবে।
তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর জন্য এই ভাটা নয়। গত দুই মাস ধরেই যাত্রীর সংখ্যা কম। এখন মানুষের মুভমেন্ট কম। এটা নানা কারণে হতে পারে। করোনাভাইরাসের পর অর্থনৈতিকভাবে অনেকেই সঙ্কটে পড়েছে।”
তার কথা সমর্থন করেই বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন কবির বলেন, গত দেড় মাস ধরে একই গতিতে যাত্রী যাচ্ছে, অত বেশি মানুষ যাতায়াত করছে না।
সদরঘাট টার্মিনালের সুপারভাইজার শেখ ফরিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২১টি ফটক রয়েছে টার্মিনালে। যাত্রী কম হওয়ায় প্রতিদিন ১৫টির মতো খোলা রাখা হয়। রোজার ঈদের ১০ দিন পর থেকেই টার্মিনালে প্রবেশের সংখ্যা কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার সারাদিন ৭৪টি লঞ্চ ছেড়ে যায় সদরঘাট থেকে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের বৃহস্পতিবার ছেড়ে গিয়েছিল ৮০টি। বৃহস্পতিবার সদরঘাটে আসে ৬৮টি লঞ্চ, আর ২৩ জুন এসেছিল ৬৫টি।
হুমায়ুন বলেন, এই পরিসংখ্যানে বোঝা যায়, তেমন হেরফের নেই।